ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুর্গাপুরে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তির শেষ নেই

প্রকাশনার সময়: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:১৮ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ২০:১৫

রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সূর্যভাগ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান শেখ। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। তার ছোট মেয়ে মাহাদিয়া মনিফার জন্মনিবন্ধন করেছেন পানানগর ইউনিয়নের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের নতুন সার্ভারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনলাইনে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনটি করেছেন। ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে সব ঠিকঠাক থাকলেও বিপত্তি বাধে যাচাই করতে গিয়ে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যখন ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন কার্ড হাতে পেয়েছেন, তখন দেখেন ছোট মেয়ের জন্মনিবন্ধন কার্ডে জন্ম তারিখ পুরোটাই উল্টোপাল্টা, জন্ম সাল ২০১০ হলেও জন্ম নিবন্ধন কার্ডে ২০০০ সাল করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি সমাধান চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তারা কোনো সমাধান দিতে পারেননি।

কোনো উপায় না পেয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে যান। উপজেলা আইসিটি কার্যালয়ে টেকনিশিয়ান আমিনুল ইসলামও কোনো সমাধান দিতে পারেনি। হতাশা নিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান। একই ভোগান্তিতে পড়েছেন দুর্গাপুর পৌরসভার দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবলু।

তবে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে শিশুদের জন্মসনদ নিয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্কুলে ভর্তির সময় শিশুর বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম সনদ চাওয়া হয়। সময়মতো জন্মনিবন্ধন পেতে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে অভিভাবকদের। শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে দেখা যায় শিশুদের জন্মনিবন্ধনে বাবা মায়ের নাম ভুল রয়েছে। বাবার নামে ‘মোহাম্মদ’ আছে, শিশুর জন্মনিবন্ধনে বাবার নামে মোহাম্মদ নেই। মায়ের নামে আক্তার থাকলে শিশুর জন্মনিবন্ধনে মায়ের নামের ঘরে বেগম লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে নামের মিল নেই জাতীয় পরিচয়পত্রের। এক্ষেত্রে শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে প্রথম ধাপে সংশোধন করতে হয় পিতামাতার নাম। ভোগান্তিটা এখান থেকেই শুরু হয়।

অন্য দিকে শিশুর পিতা প্রবাসে থাকায় পাসপোর্টের নামের সঙ্গে অনেকের মিলছে না জন্মনিবন্ধনের নাম। এতে অভিভাবকদের আরেক ধাপে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দেশে ফিরে নতুন করে পাসপোর্ট করতে গেলে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে ত্রিমুখী ভুল থাকায় ভোগান্তি আরও বাড়ছে।

বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ১ম হতে ৮ম শ্রেণির ভর্তির জন্য অনলাইনে থাকতে হচ্ছে ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন। অথচ অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর জন্মনিবন্ধন অনলাইনে ইংরেজি ভার্সন করা নেই।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শেষ হলেই ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। ৮ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করতে জন্মনিবন্ধনের ইংরেজি ভার্সনের প্রয়োজন হওয়ায় অধিকাংশ মাধ্যমিক-নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করতেই শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধনের ইংরেজি কপি নিচ্ছেন। ইংরেজি জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে দেরি হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না নতুন শ্রেণিতে। বিশেষ করে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

জন্মনিবন্ধনের ইংরেজি ভার্সন তৈরি করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফরম পুরণ করার পর সেই আবেদন উপজেলা বা জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দিয়ে অনুমোদন করাতে হয়। কোথাও কোথাও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদন হলেও আবার কোথাও উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সামনে সশরীরে হাজির হয়ে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আবেদন অনুমোদন করাতে হচ্ছে। উপজেলা থেকে অনুমোদিত আবেদন নিয়ে পুনরায় আবেদনকারীকে আসতে হয় নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদে। ভুক্তভোগীদের দাবি, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকেই এসব সেবার ব্যবস্থা করা হোক।

এদিকে, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের নতুন সার্ভারের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। এমনকি নতুন সার্ভারে আনা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। এতে আরও বিপাকে পড়েছে তারা।

পানানগর ইউনিয়নের সচিব আব্দুল জলিল জানান, ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে জন্মনিবন্ধনের জাতীয় সার্ভারের গতি বৃদ্ধি করলে গ্রাহকরা আরও বেশি সেবা পাবে। আর জন্মনিবন্ধনের সাল পরিবর্তনের বিষয়টি এটা উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার।

উপজেলা টেকনিশিয়ান আমিনুল ইসলাম জানান, জন্মনিবন্ধনের সার্ভারটি কিছু পরিবর্তন আনায় সাময়িকভাবে কিছুদিন জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে কিছু কাজের বিঘ্নিত হয়েছে। তবে এখন আবার চালু হয়েছে। সার্ভারটি কাজ করার গতিশীলতা ঠিকঠাক থাকলে সমস্যা কাটিয়ে উঠবো। আমাদের এই সমস্যাগুলো মিটিং এর মাধ্যমে উপরে জানিয়েছি। রাত দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের সার্ভার একটি জাতীয় পর্যায়ের সার্ভার। যার কার্যক্রম সারাদেশে একযোগে পরিচালিত হয়। যার কারণে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের নতুন সার্ভারটি ধীর গতিতে কাজ হচ্ছে। তবে সাল পরিবর্তনের বিষয়টি উপজেলা পর্যায় হতে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ