ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল দিনমজুররা

প্রকাশনার সময়: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ২১:১৯

নুরুল আনোয়ার পেশায় একজন দিনমজুর। প্রতিদিন কাজ করে ৬শ টাকা উপার্জনে চলে তার ৫ সদস্যের পরিবার। অল্প আয়ের এই শ্রমিকের বাজারে গিয়ে সবজি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা যেন রিতিমতো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। যেন কোনোভাবেই মেলাতে পারছেন না আয়ের সাথে ব্যয়ের পার্থক্য। একই অবস্থা দেখা গেছে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও কাঁচা বাজারে আগুনের উত্তাপে পুড়ছে ভোক্তা সাধারণ। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। সংসারের চাকা ঘুরাতে গিয়ে ঘুরতে হচ্ছে নিজেকে। দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতিতে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ নেমে এসেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে।

সরেজমিনে উপজেলার বারইয়ারহাট, মিঠাছাড়া, হাদিরফকিরহাট, নিজামপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা, শীতকালীন মুলা ৮০ টাকা, তিতা করলা ১০০টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, গাঁজর ১২০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা এবং টমেটো প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মাছ, বয়লার মুরগির ডিমের দামও চড়া।

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে মিলছে আলু এবং পেঁয়াজ। লাগামহীন বাজারে কারসাজি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সবজির পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বাজার অস্থিতিশীল হওয়াতে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।

মিরসরাই সদরে বাজার করতে সাব মিয়া বলেন, ‘জিনিস পত্রের যে দাম, ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি ও ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। সিএনজিচালিত আটোরিকশা চালিয়ে কোনোরকম সংসার চালাই। আগে কোনোরকম ডাল আলু খেয়ে বাচ্চা-কাচ্ছা নিয়ে দিনকাটাতাম। এখন ১ কেজি আলুর দাম ৫৫ টাকা। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে ২টি সবজি ও ১ কেজি মাছ কিনলে টাকা শেষ। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে আমরা কোথায় যাবো। পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। নীরবে কান্না করা ছাড়া আর উপায় নেই।’

উপজেলার হাদিরফকির হাটে বাজার করতে আসা আলাউদ্দিন বলেন,‘বর্তমানে বাজারের যে পরিস্থিতি, দিনদিন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে এর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সকালে এক দামতো বিকেলে আরেক দাম। জিনিসপত্রের দাম তো বেড়েই চলেছে, বেতন তো আর বাড়ছে না। সেলসম্যানের চাকরি করে কয় টাকাই বা বেতন পাই।’

উপজেলার মিঠাছাড়ায় বাজার করতে আসা শাওনেয়াজ হোসেন বলেন, ‘বাজারে এসে দেখছি ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ডিম কিনতে এসে দেখি প্রতি ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। প্রাইভেট পড়িয়ে কোনোরকম পরিবার চালাই। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়ায় এখন আয় থেকে ব্যয় বেড়ে গেছে। টিকে থাকা কঠিন হচ্ছে দিন দিন। জিনিসের দাম একবার বড়লে তা কমে না আর। যে পরিস্থিতি আসতেছে না খেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।’

সবজির দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ জানতে চাইলে মিরসরাই সদরে সবজি বিক্রেতা নুর উদ্দিন বলেন, পাইকার থেকে বেশি দামে ক্রয় করে বিক্রিতে যদি দুই চার টাকা লাভ না করি তাহলে চলবো কি করে?

মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখনো এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে কেউ বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাইলে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তা নিয়ন্ত্রণ করবো। আমাদের তদারকি চলমান রয়েছে।’

নয়া শতাব্দী/এসএ/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ