ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৪ মাস ধরে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ! মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশনার সময়: ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:১৮

শেরপুরের নকলা উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) চার মাস যাবৎ অজ্ঞাত কারণে বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার দেশের প্রতিটি পুরাতন ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটিক্লিনিক স্থাপন করেন। সেসব ক্লিনিকে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ করা হয়। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাদের সকল বেতন ভাতাদি প্রতিমাসে নিয়মিত দিয়ে আসলেও, অজ্ঞাত কারণে জুলাই মাস থেকে সকলের বেতন বন্ধ রয়েছে। ফলে সিএইচসিপিদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে তারা জানান।

বাউসা ক্লিনিকের সিএইচসিপি এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এতে দেশের লাখ লাখ গ্রামীণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু আমরা স্বল্প বেতনে নিয়মিত কাজ করেও চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বেতন কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না তাও জানি না। শুনেছি সারাদেশের নাকি একই অবস্থা। আমাদের মধ্যে অনেকের আয়ের অন্য কোনো উৎস না থাকায়, একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে বেতন বন্ধ। এখন সংসারের খরচ চালানো নিয়ে আমরা বেকায়দায় পড়ে গেছি। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে চেয়েও কোনো সঠিক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলে।

ধুকুড়িয়া ক্লিনিকের লুৎফর রহমান বলেন, শুনেছিলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে সরকারি চাকরির মতো সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধা পাবো তো দূরের কথা, এখন চার মাস ধরে আমাদের বেতনই বন্ধ হয়ে আছে।

ভূরদী ক্লিনিকের বিজলী বেগম বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে সর্বশেষ বেতন পেয়েছিলাম। এরপর থেকে বিগত ৪ মাস আমরা বেতন পাচ্ছি না, চলতি মাসেও পাবো বলে মনে হচ্ছে না। শুনেছি অর্থ ছাড় না হওয়ার কারণে আমাদের বেতন আটকে আছে। তবে কবে নাগাদ বেতনের অর্থ ছাড় করা হবে তাও জানি না। এ অবস্থায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে অনেকের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

চিলথলিয়া ক্লিনিকের আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রায় এক যুগ ধরে একই বেতনে চাকরি করছি, আমাদের বেতনের কোনো পরিবর্তন নেই। শুনেছিলাম আমাদের চাকরি নাকি রাজস্ব খাতে নেওয়া হবে; অথচ এখন নিয়মিত বেতনই পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় সংসারের খরচ বহন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আশা করছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ আমাদের মতো গ্রামীণ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের সকল কষ্ট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটি প্রকল্পের অধিনে চলছে। মূলত ওই প্রকল্পই কমিউনিটি ক্লিনিকের বেতন ছাড় দেয়। তবে জুলাই মাস থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় আপাতত সিএইচসিপিদের বেতন আটকে আছে। এই সমস্যা শুধু নকলা উপজেলায় নয়। সারা দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপির বেতন বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই অর্থ ছাড় দেওয়া হতে পারে। প্রকল্প থেকে তাদের বেতনের অর্থ ছাড় করলেই সকল সিএইচসিপিরা তাদের বকেয়াসহ বেতন পেয়ে যাবেন।

দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কমিউনিটিক্লিনিকের সিএইচসিপিদের বেতন ছাড় না হলে তাদের মাঝে কাজের স্পৃহা ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে জনস্বার্থে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ স্থায়ীভাবে সকল সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন অগণিত সুবিধাভোগীসহ স্থানীয় সুশীলজন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ