রাজশাহীতে ন্যায্যমূল্যের টিসিবির পণ্য পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন মধ্যবিত্তরা। এক শ্রেণির অসাধু চক্রের ব্যবসায়িক স্বার্থে ভিড়তে পারছেন না তারা। টিসিবির ট্রাকের সামনে নারীদের হুড়োহুড়িতে লোকলজ্জার ভয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন টিসিবির পণ্য কিনতে আগ্রহ থাকলেও বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
বাজারে সয়াবিন তেল, চিনি, ডালসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় টিসিবির পণ্যের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মধ্যবিত্তের। খোলা বাজারের চেয়ে টিসিবির পণ্য অনেক কম টাকায় পাওয়া যায়। তাই স্থানীয় এক শ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল নারীর কারণে সরকারের ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই।
টিসিবির ট্রাকের লাইনে ঘুরেফিরে বারবার দাঁড়ানোসহ লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি-গালিগালাজ এসব উচ্ছৃঙ্খল নারীর নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কাণ্ড দেখে পণ্যের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও পরিবেশ খারাপ হওয়ায় লোকলজ্জার ভয়ে অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন না। আবার প্রশাসনকেও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
টিসিবির রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মোট টিসিবির ডিলারের সংখ্যা ১৮৩ জন। তারা নির্দিষ্ট এলাকায় ট্রাকযোগে ন্যায্যমূল্যে বর্তমানে টিসিবির তিনটি পণ্য বিক্রি করছেন। পণ্যগুলোর মধ্যে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি, চিনি ৫৫ ও বোতলজাত ভোজ্য সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা লিটার দরে। খোলা বাজারে একই মসুর ডাল ১০০ টাকা কেজি, চিনি ৭৬ টাকা কেজি এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা লিটার। সুতরাং প্রতিটি পণ্যেই কম টাকা লাগছে টিসিবি থেকে ক্রয় করলে।বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীর ভদ্রা, সাহেববাজার, গোরহাঙ্গা, পোস্টাল একাডেমি, লক্ষ্মীপুর, আমচত্বরসহ টিসিবির ডিলারদের বিক্রয় পয়েন্টগুলোতে ট্রাকে করে টিসিবি পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১০টার পর শুরু হয় এসব পণ্য বিক্রি। চাহিদা বেশি থাকায় বেলা ২টার মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। এসব বিক্রয় পয়েন্টে নারী ও পুরুষদের পৃথক লাইন থাকে। তবে পুরুষদের চেয়ে নারীদের লাইনে লোক সমাগম অনেক বেশি। এসব লাইনে স্থানীয় বস্তি এলাকার নারীরা ভিড় জমায়।
বিক্রয় পয়েন্টে ট্রাক আসার বহু আগে থেকে ইট বা বাজারের ব্যাগ দিয়ে লাইন তৈরি করে রেখে যায়। একাধিক বিক্রয় পয়েন্টের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই লাইনে যেসব নারী দাঁড়িয়ে থাকে, তারা একবার পণ্য নিয়ে আশপাশে কোথাও তা রেখে এসে আবারো লাইনে দাঁড়ায়। এ সময় তাদের কিছু বলা হলে তারা মারমুখী আচরণ করেন। এমনকি মারামারি ও গালাগালি দিয়ে লাইনের সিরিয়াল ভঙ্গ করে সামনের দিকে ছুটতে থাকেন। নারী হওয়ায় পুরুষ সদস্যরা তাদের কিছু বলতে পারেন না। পাশে নারী পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের কিছু করার থাকে না। হুড়োহুড়ি করে পণ্য কিনতে তারা ভিড় জমান। এসব কাণ্ড দেখে মধ্যবিত্তরা লোকলজ্জার ভয়ে লাইন থেকে সটকে পড়েন। পণ্য কিনতে আর অপেক্ষা করেন না। অসাধু চক্রের নারী সদস্যরা টিসিবি পণ্য খোলা বাজারে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে থাকেন।
এমন পরিস্থিতিতে খোদ টিসিবির কর্মকর্তারাসহ ডিলাররাও বিরক্ত হয়ে গেছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য টিসিবির একাধিক ডিলার জানান, প্রতিটি ডিলারকে ট্যাবের মাধ্যমে সফটওয়ারে পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে ভোটার আইডি কার্ড নম্বর এন্ট্রি করার ব্যবস্থা করা হলে বারবার পণ্য ক্রয়কারীকে চিহ্নিত করা যাবে। এভাবে তাদের রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন ডিলাররা।
টিসিবির রাজশাহী অফিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রবিউল মোরশেদ সাংবাদিকদের জানান, আমরা বিষয়টা সিরিয়াসলি নিয়েছি। কাস্টমাররা বিরক্ত, প্রশাসন বিরক্ত, আমরাও বিরক্ত। ওরা গ্রুপ করে দাঁড়ায়। একজন চলে গেলে আরেজন এসে দাঁড়ায়। কাজেই তাদের লাইনই শেষ হয় না। এই বিষয় নিয়ে টিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। নির্বাচন অফিসের কাছ থেকে কালি নেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, যা পণ্য ক্রয়ের পর ক্রেতাদের হাতে লাগিয়ে দেয়া হবে। ডিলারদের ট্যাবে সফটওয়ার দেয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে টিসিবির এই কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ