ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মৃত্যু ঝুঁকিতে জীবন রক্ষাকারীরা

প্রকাশনার সময়: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ২০:১৮

১৯৬৪ সালে নির্মিত হয় কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটি। এর পর কেটে গেছে ৫৯ বছর। সময়ের সাথে সাথে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভবনটি। নানা স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ে আহত হচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। এভাবেই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে দমকল বাহিনী। ফায়ার স্টেশনে ২৭ জনের স্থলে কাজ করেন ৯ জন। নেই পর্যাপ্ত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স শাখা। যন্ত্রপাতিও অপ্রতুল। এছাড়া আরো চতুর্মুখী সমস্যা নিয়েই কক্সবাজার ও ঈদগাঁওবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থা। এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয়েছিল স্টেশনটি। এরপর কয়েকবার সংস্কার করা হয়। ভবনটির ঝুঁকি সম্পর্কে জানিয়ে ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট দমকল বাহিনী গণপূর্ত বিভাগের কাছে আবেদন করেছিল তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন ভুইয়া। কিন্তু তার প্রত্যুত্তর মিলেনি এখনো।

জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সমুদ্র শহর কক্সবাজারে ৫ হাজারের অধিক বহুতল ভবন রয়েছে। এখানে রয়েছে মেডিকেল কলেজ, নির্মিত হচ্ছে আর্ন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্টেডিয়াম, খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্ধাস্তুদের জন্য শেখ হাসিনা আবাসনে নির্মিত হয়েছে দেড় শতাধিক বহুতল ভবন। গড়ে উঠছে পাঁচ তারকা মানের একাধিক হোটেল ও পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র। কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ সড়কে রয়েছে ৪০টিরও বেশি হ্যাচারি। কিন্তু এসব বহুতল ভবনে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা কিংবা অগ্নিনির্বাপণের জন্য নেই স্নোরকেল কিংবা টিটিএল গাড়ি। সমুদ্র শহর কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস সেশনে নেই ডুবুরি দল। পাহাড় বেষ্টিত এই জনপদের ফায়ার সার্ভিসের কাছে নেই পাহাড় ধসের পর উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই এর জন্য আলাদা জনবল।

সূত্রটি আরও জানায়, কক্সবাজার ফায়ার স্টেশনটি দ্বিতীয় শ্রেণির। এমন স্টেশনে ২৭ জন লোকের চাহিদা রয়েছে। যার মধ্যে ১৬ জন ফায়রম্যান, একজন সুইপার, একজন বাবুর্চি ও একজন সহকারী, ৪ জন চালক, ২ জন লিডার, একজন সাব অফিসার ও একজন অফিসার। কিন্তু সবমিলিয়ে কক্সবাজারে রয়েছে ১১ জন। যার মধ্যে কমপক্ষে ২ জন নিয়মিত ছুটিতে থাকছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবার দিনগত রাত একই সময়ে খুরুশকুল ও শহরে পৃথক দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শহরের ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের পাশে অগ্নিকাণ্ডে ৩ টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অপরটি খুরুশস্কুলের শীলপাড়ায় ঘটে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৭ জন কর্মী খুরুশকুলের আগুন নেভাতে গেলে বাকি ২ জনের শহরের আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়।

সরেজমিনে সোমবার ফায়ার স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের অধিকাংশ পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পরে দেখা যাচ্ছে লোহার রট। এরি মাঝে দমকল বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা বলেন, প্রায় প্রতিনিয়ত ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়ে। এতে প্রায়ই সময় কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে লোকবল সংকট। এই স্টেশনে ২৭ জন জনবল থাকার কথা। কিন্তু আমরা মাত্র ১১ জন আছি। এর মধ্যে তো কেউ না কেউ ছুটিতে থাকছেন।

তিনি দুঃখ করে বলেন, ২০১৪ সালে কক্সবাজারে অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণের জন্য দুই একর জমি চায় ফায়ার সার্ভিস। ২০ বারেরও অধিক সময় আবেদন করার পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমাদেরকে ডিসিবাংলোর নিচে ২ কানি জমি দেয় গণপূর্ত। সেই জমির মূল্য পরিশোধের পর গেল বছর আমরা আমাদের রেজিস্ট্রি করি। কিন্তু এখনো সেখানে অবৈধ দখলদার থাকায় জমি বুঝে নিতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, সেই জমিতে একটি অত্যাধুনিক পাঁচ তলা ভবন নির্মিত হবে। আমাদের জায়গা না থাকায় আমরা আমাদের নামে বরাদ্দকৃত গাড়ি চট্টগ্রামে রেখে দিয়েছি দীর্ঘদিন ধরে। ওই ভবন নির্মিত হলেই আধুনিক ব্যবস্থাপনা পাবে দমকল বাহিনী। আপাতত মৃত্যু ঝুঁকি থেকে বাঁচতে এখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করব। এ লক্ষ্যে ডিসি বাংলোর নিচে আমাদের খালি জমিতে কিছু শেড নির্মাণ করছি। যেখানে আমরা আপাতত থাকব।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, কক্সবাজারে নয় শুধু চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের সব জায়গায় আমাদের লোকবল কম। এছাড়া কয়েকদিন পর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে সেখানে ১২৮ জন লোক দরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্টেশন থেকে এর জন্য লোকবল আনা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন ভবনটি নিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতি তো রয়েছে পাশাপাশি সরকারি দপ্তরের নানা সমন্বয়হীনতার কারণে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও আমি দ্রুত কক্সবাজারের জন্য কিছু করার চেষ্টায় আছি।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের জমি দখল পেতে যা যা করণীয় সবই করবে জেলা প্রশাসন।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ