ঢাকা, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জেলেদের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ

প্রকাশনার সময়: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:০২

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার্থে বুধবার (১১ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যা অব্যাহত থাকবে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময় মাছ ধরা, পরিবহন, বিপণন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ থাকবে।

কক্সবাজারে বর্তমানে ২৪ হাজারের বেশি জেলে রয়েছে। ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়বেন জেলেরা। যে কারণে অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন তারা। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। সেই চাল নির্ধারিত সময়ে বিতরণের দাবি জেলেদের।

জেলা মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে প্রধান প্রজনন মৌসুম ও ইলিশ সুরক্ষায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ বাস্তাবায়নে কঠোর আইন প্রয়োগের কথাও বলা হয়েছে। তবে এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে ৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩’ শিরোনামে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইন বাস্তবায়ন এবং সঠিকভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সভায় সিদ্ধান্ত হয় ১১ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে সাগরে মাছ ধরার সব ট্রলার বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাত করণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষেধ।

নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মৎস্য অধিদফতর, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ অন্যন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে। এ ছাড়া জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অনিয়মের খবর পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলেরা বলছেন, এবার ভরা মৌসুমে ইলিশ কম থাকায় অনেকেই দেনার দায়ে জর্জরিত। এরই মধ্যে আবার ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলে আশায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

জুবায়ের, ফরিদ ও ইলিয়াসসহ অনেক জেলেই জানান, আয় বন্ধ হয়ে গেছে, সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে। তাই সব জেলেকে চাল দেওয়ার দাবি জানাই।

খুরুশকুল কুলিয়াপাড়ার জেলে নাজির হোসেন বলেন, মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে, তাই ট্রলার তীরে এনে রেখেছি। নিষেধাজ্ঞা সময়ে সরকার জেলেদের জন্য যে চাল দেবে, তা দ্রুত বিতরণের দাবি জানাই।

আরেক জেলে হান্নান বলেন, এ মৌসুমে তেমন মাছ ধরা পড়েনি, তাই সব ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। এখন মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে, এতে আবার সংকটে পড়ব।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারি ঘাটে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। তবে সংসার চালানো নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে খাইরুল আমিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঠিকমতো মাছ আহরণ হয়নি। তার মধ্যে আবার ২২ দিন মাছ ধরা যাবে না। জানি না সামনের দিনগুলো কি হয়?

জেলে বেলায়েত হোসেন বলেন, বন্ধের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যে চাল দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। তার মধ্যে এ চাল বিতরণ নিয়ে হয় দুর্নীতি। এ সময় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। দিনমজুরি করে কোনোভাবে জীবনযাপন করতে হয়। জেলেদের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়া উচিত বলে দাবি করেন তিনি।

ফিশারি ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, ধারদেনা করে ব্যবসা করছি। সাগরে ইলিশ মাছ পড়লেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুবিধা করতে পারিনি। এ অবস্থায় ব্যবসায় লাভ তো দূরের কথা দেনা শোধরাতে পারব কিনা সন্দেহ আছে।

কক্সবাজার জেলা ফিসিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গেল ৬৫ দিন অবরোধের পর জেলেরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ পায়নি। এর বড় কারণ ছিল বৈরী আবহাওয়া। এ কারণে জেলেদের যথাযথ সহায়তা প্রদান করা উচিত। বিদেশি মাছ ধরার জাহাজ দেশের সমুদ্রসীমায় আসতে না দেওয়াসহ জলদস্যুমুক্ত নিরাপদ সাগর নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় মৌসুমের এ সময়ে ইলিশ বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ে। তাই এ সময় সমুদ্র ফ্রি রাখতে হবে। তাহলে পরবর্তী বছর অধিক পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে। এ সময় বেকার হয়ে যাওয়া ২৪ হাজার জেলে পরিবারকে ৬০২ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ