নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় একদিনের টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। সহাস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে অসংখ্য আমনের খেত। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎসচাষি ও কৃষকরা। সবজি চাষিদেরও সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে।
বাদ যায়নি কেন্দুয়া পৌরশহর। জলাবদ্ধতায় পৌরশহরের কান্দিউড়া, শান্তিবাগ, আরামবাগ ও কমলপুরের বিভিন্ন এলাকায় তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে বাসাবাড়ি ও দোকানে। বাসায় পানি ওঠায় অনেকের রাত কেটেছে নির্ঘুম। আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভিজে বাসিন্দাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে ঢাকা স্ট্যান্ডার্ড বেকারির। বেকারিতে পানি ওঠায় চিনি, আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন মালামাল ভিজে একাকার হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনেকের বাসাবাড়িতে পানি রয়েছে। রাস্তাঘাট ও গাছপালারও ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল এলাকার সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানা গেছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করেছেন।
মৎসচাষি আব্দুর রউফ জানান, সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখেন তার পুকুর পাড়ে প্রায় হাঁটু পানি। তিনি শিং ও মাগুর মাছ চাষ করেছিলেন। তার অন্তত ১০/১২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন। মৎসচাষি ঝুমন জানান, তার ৪টি পুকুর ডুবে ৩৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার শ্রেষ্ঠ মৎসচাষি মো. আবু হারেছ জানান, ৪টি পুকুরের পাড় ভেঙে ও ডুবে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
পিজাহাতি গ্রামের শাহজাহান বাঙ্গালি জানান, তার ১৭ কাঠা (১৭০ শতক) জমি পানির নিচে। এসব জমিতে ৪৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান করছিলেন। সবেমাত্র তোড় এসেছে দুই-চার দিন পরে এই জমি ভাসলেও ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। রউফ, ঝুমন, হারেছ নয়; এমন হাজারো মৎসচাষি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে বিষাদের আবহ বইছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে হাজার হাজার কৃষক পরিবারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ধানের জমি নিমজ্জিত হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পানি যদি দুয়েকদিনের মধ্যে না কমে তাহলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার আজহারুল আলম জানান, এখন পর্যন্ত যেটুকু খবর নিতে পারছি তাতে হাজারের অধিক পুকুর ডুবে যাওয়ার খবর পেয়েছি। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়বে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল জানান, টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অনেক পুকুর, আমন ফসলের জমি, সবজি খেত ডুবে গেছে। কয়েকটি স্থানে রাস্তা ধসে গেছে। দুপুর থেকে বৃষ্টি কমেছে। আর বৃষ্টি না হলে এবং দুয়েক দিনের মধ্যে পানি সরে গেলে ধানের খুব বেশি একটা ক্ষতি হবে না। তবে মৎসচাষিদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষানো কঠিন।
নয়া শতাব্দী/এসএ/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ