বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা অংশে বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গেছে। তিস্তার দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। সে পানিতে তলিয়ে গেছে চরের ফসল। বছরজুড়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এছাড়া ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন সংকট।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য জানায়, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি) এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের উত্তর সিকিম এ তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘন্টা ভারী বৃষ্টি পাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়াও রংপুর অঞ্চলসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এলাকায় রাত থেকেই বৃষ্টি চলছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৮ সে.মি. নিচে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩০ সে.মি উপরে রেকর্ড করা হয়েছে।
বিস্তীর্ণ তিস্তা চরাঞ্চলে বিভিন্ন ফসলসহ বসবাসকারীদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। গরু-ছাগল নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে। উৎকণ্ঠায় রাত পার করলেও পানি নেমে যেতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বানভাসী মানুষের মাঝে। তবে বন্যা পরবর্তী ভাঙ্গণের আশংকা রয়েছে এখনো।
গড্ডিমারী এলাকার কৃষক ফোরকান মিয়া জানান, চরের জমিতে আমন রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ পানি আসায় সব ডুবে আছে। কতটুকু ধান থাকবে বলা যায় না।
কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, চরে কয়েকদিন আগে ধান কেটে রেখেছি। হালকা বৃষ্টি হওয়ার জন্য নিয়ে আসিনি বাড়িতে। পানি আসার খবরে কোনোরকমে ভেজা ধান নিয়ে আসছি। বৃষ্টি পড়তেছে। তাই ধান মাড়াই করতেও পারছি না।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, বন্যার পানিতে চরের সবজি ক্ষেত সহ বিভিন্ন ফসল ডুবে আছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের লোকজন কাজ করছে। এখনো ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হয়নি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা ফেরদৌস, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার জানান, সময় তিস্তা চরাঞ্চলের পানি বৃদ্ধির সার্বিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আমরা নদী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে ও বিভিন্নভাবে নদী এলাকার মানুষকে সচেতন করেছি। রাতে নদী এলাকা পরিদর্শন করে সার্বিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দেবে। আমরা সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছি। নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ