ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির প্রহর গুনছেন সবার প্রিয় সুবল ভাই

প্রকাশনার সময়: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৫৭

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের সবার প্রিয় সুবল ভাই। জীবনে জনসেবাই যেন তার ব্রুত। স্বাধীনতা উত্তোরকালে মহামারি কলেরা থেকে বাঁচিয়েছেন কত শত প্রাণ। পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন মেহনতির মানুষের জীবনে। আলোর প্রদীপ হয়ে অন্ধকার দুর করেছেন হাজারো ছিন্নমুল মানুষের।

অগণিত মানুষের সেবায় কাটিয়েছেন জীবনের সবকটি বসন্ত। সেবা করেছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের। অসাধারণ একজন অভিনেতার খেতাবও রয়েছে তার ঝুলিতে। অহিংসু,ন্যায় পরায়ণ, সদা হাস্য এই মানুষটি এখন অশীতিপর বৃদ্ধ। এতদূর হেঁটে রোগে শোকে কিছুটা কাবু হয়েছেন। অপুষ্টিতে ভোগছে ছোট এই দেহটি। সেই সাথে রয়েছে জীবনের চরম অর্থকষ্ট। তবুও প্রিয় সুবল ভাই এখনো ছুটে যান মানুষের বিপদে।

লিখেছেন গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুনসহ নানা লোক গান। কবিতার সেই তালেব মাষ্টারের মতো, হতভাগ্য বাতিওয়ালা .. .. নিজের জীবনই অন্ধকারমালা। জীবন সায়াহ্নে এসে বাধ্য হয়েছেন মানুষের অনুগ্রহে জীবনের চাকা ঘোরাতে। অকপটে স্বীকার করলেন তিনি অসুখে-বিসুখে অনেকেই উদাত্ত সহযোগিতা করে থাকেন।

একদা মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে তার দলে লেখান সালেহীন সুবল। প্রিয় নেতার মত ছিল আটপৌড়ে জীবন। গরীবের সাথী, মজলুমের বন্ধু, মেহেনতি মানুষের মুখপাত্র, একজন দরদী সমাজ সেবক হিসেবে মানুষ তাকে চিনে এবং জানে। ফোটে উঠে তার মাঝে প্রিয় নেতার আচার আচরন, চলন বলন।

সেই থেকে প্রিয় পোষাক পাঞ্জাবী, লুঙ্গি আর তালের টুপি। এখনো এমন পোষাকেই দেখা মেলে প্রিয় সুবল ভাইকে। কালের আবর্তে তালের টুপি হারিয়েছে তার উপযোগিতা। তাই এখন মাথায় পড়েন কাপড়ের টুপি। আর সবই রয়েছে অবিকল তার জীবনের। প্রিয় নেতার মৃত্যুর পর তিনিও দলছুট হয়েছেন। তবে হননি আদর্শচ্যুত। আজও তিনি রয়েছেন সাদামাটা জীবনের গলিতেই।

এই মানুষটির জন্ম গফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মীর বংশের ঘরে। তার পুরো নাম মীর মোনায়েম সালেহীন সুবল। ভালবেসে সবাই তাকে সুবলদা বলে ডাকেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই মানুষটির জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সনদ। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে একরাশ আশা নিয়ে এখনো বুক বেঁধে রয়েছেন সেই মর্যাদার জন্য। আবেদন করেও পাননি তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব। কারন তিনি রনাঙ্গণে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি।

বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশ বিনির্মানে মহান মুক্তিযুদ্ধে নয়মাস যারা ট্রেনিং নিয়ে রনাঙ্গনে পাক বাহিনীর সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছেন,শুধু তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা! যারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, শব্দ সৈনিক,বিভিন্ন ক্যাম্পে যারা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করে জীবন বাঁচিয়েছেন, তারা সকলেই ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত সৈনিক। স্বাধীন দেশে তারা সকলেই পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ও সন্মান। শুধু পাননি এই সাদামাটা সুবল ভাই।

তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর দিবসে গফরগাঁও বাজারে বোমা হালায় হতাহতদের উদ্ধার ও দাফন শেষে হালুয়াঘাট হয়ে ভারতের মেঘালয়ে চলে যান। সেখানে মেডিকেল প্রশিক্ষন নিয়ে স্থানীয় ওয়ারেঙ্কা ক্যাম্পে ভারতের স্মরনার্থী শিবিরের চিকিৎসা ক্যাম্পে। সেখানে তিনি সান্নিধ্য লাভ করেন গফরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য আবুল হাশেম (সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী ও তিয়াত্তরের প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য), বৃহত্তর ময়মসিংহের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাটির শার্দুল বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ প্রমুখকে।

এ দুজনই জীবিত, তবে আবুল হাশেম বয়সের কারনে স্মৃতিভ্রষ্ট। এ প্রসঙ্গে মীর মোনায়েম সালেহীন বলেন, জীবনের শেষ ইচ্ছা,এই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে মৃত্যুর পর যেন বাংলাদেশের পতাকায় আচ্ছাদিত হয়ে অন্তিম শয়ানে যেতে পারি। সেই জন্য আমি চাই রাষ্ট্রপতির একটি সাক্ষাত। তিনিই একমাত্র আমাকে সনাক্ত করতে পারেন মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মরনার্থী শিবিরের ক্যাম্পে থাকা একজন সেবক হিসেবে।

আজন্ম বিপ্লবী এই মানুষটিকে ভালবাসার প্রতিদান হিসেবে সালটিয়া ইউনিয়নের জনগণ ২০০৩ সালে তাকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। আদর্শিক অবস্থান থেকে খানিকটা সড়ে এসে যোগ দিয়ে ছিলেন বিএনপিতে। আজও রয়েছেন এই দলে। তবে কখনো হারাননি নৈতিকতা। নির্মোহ অবস্থান থেকে সফলতার সাথে পালন করেছেন জন প্রতিনিধির দায়িত্বভাড়।

বিরল এই স্বেচ্ছাসেবক এক মেয়ে আর দুই ছেলের বাবা, প্রিয় জীবনসাথী পারুল ইয়াসমীনের সাথে নাতি নাতনীর সান্নিধ্যে গ্রামের কূটিরে কাটাচ্ছেন তার অন্তিম সময়গুলো। দারিদ্রের কাছে তিনি এখনো মহান হয়ে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকুন সবার প্রিয় সুবল ভাই, স্রষ্ঠার উপর ভরসা রাখুন আর অপেক্ষায় থাকুন রাস্ট্রপতির সাক্ষাতের।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ