ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান তিনবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য

প্রকাশনার সময়: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৮ | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০

নেত্রকোণার মদনে কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান মো. এখলাছ মিয়া নামের এক ইউপি সদস্য। তিনি মদন উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের বিপরীত পাশের একটি মার্কেটে কাপড় ইস্ত্রি করেন। কাজের ফাঁকে ভোটারদের সুখ-দুঃখের খবর জানতে বাড়ি বাড়ি যান।

এখলাছ মিয়া (৫০) উপজেলার চানগাঁও ইউপির চানগাঁও চকপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তার দাবি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই কাপড় ইস্ত্রির কাজ করেন। তখন এলাকার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনে তার জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা জাগে। এরপর ২০০৩ সালের প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনে জয়ী হন। তারপরও কাপড় ইস্ত্রির কাজ বাদ দেননি। এরপর ২০১১ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। তখন সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ২০১৬ সালে ও ২০২২ সালের নির্বাচনে তাকে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার নির্বাচিত করেন।

জানা গেছে, উপজেলার চানগাঁও গ্রামের মৃত সুরাফ আলীর ছেলে এখলাছ মিয়া। মেম্বার হওয়ার আগে থেকেই দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে তিনি কাপড় ইস্ত্রির কাজ শুরু করেন। ৩০/৩৫ বছর ধরে তিনি কাপড় ইস্ত্রি ও অন্যের জমি বর্গায় চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন। কাপড় ইস্ত্রি করে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পান। এখলাছ মিয়া পরিবারে স্ত্রী এক মেয়ে ও দুই ছেলে।

তার একমাত্র মেয়ে ফারজানা আক্তার মদন সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছেলে শরীফ ২০২৩ সালে উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর আমিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছোট ছেলে আরিফ মিয়া একই বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়েন। এখলাছ মিয়ার কোনো কৃষিজমি নেই। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বসতঘরে ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকেন।

কপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নজুফা আক্তার বলেন, বিনা টাকায় আমাকে খাদ্য সহায়তার ভিজিডি কার্ড দিয়েছেন। আমরা অনেক গরিব মানুষ। আগে আমার শাশুড়ি বিধবা ভাতা পেতেন। এখন আমি প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। তিনি গরিব মানুষের জন্য কাজ করছেন।

ইউপি সদস্য এখলাছ মিয়ার স্ত্রী ইসরাত জাহান পান্না বলেন, আমার স্বামীর টাকা-পয়সা নেই। কিন্তু তিনি গরিবের সেবা করার জন্য ইউপি সদস্য হয়েছেন। মানুষের কাজ করতে গিয়ে আয় রোজগার কম হয়। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমার স্বামী মানুষের ভালবাসায় তিনবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি যেন মানুষের ভালবাসার সঠিক মূল্যায়ন ও সেবা দেন সেই জন্য আমিও তাকে উৎসাহিত করি।

ইউপি সদস্য এখলাছ মিয়া বলেন, মানুষের ভালবাসায় তিনবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি। সাধ্যমতো পাশে থেকে মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করছি। কিন্তু নিজের পরিবার ও ছেলেমেয়ের লেখা পড়ার খরচ মেটাতে ৩০/৩৫ বছর যাবৎ কাপড় ইস্ত্রির কাজ করে আসছি। নির্বাচন চলাকালেও দিনের বেলা ইস্ত্রির কাজ করেছি, রাতে ভোটারদের কাছে গিয়েছি। আমার ওয়ার্ডের ভোটাররা আমার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়ে বারবার নির্বাচিত করেছে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আমি কাজ করার চেষ্টা করছি। আমি চকপাড়ার সর্বস্তরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।

চানগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল আলম তাদুকদার বলেন, আমি তিনবার চেয়ারম্যান হয়েছি ওই তিনবার এখলাছও মেম্বার হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বিতরণ করছেন তিনি। এখলাছের কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। কাপড় ইস্ত্রি করে সংসার চালান তিনি। কাজের ফাঁকে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ নেন। অসচ্ছলতার মধ্যেও এখলাছ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দারিদ্রতার মধ্যে থেকেও নিঃস্বার্থভাবে জনপ্রতিনিধিত্ব করার নজির কম। তিনি একজন উদ্যোমী। এখলাছ বর্তমান সমাজের জন্য এক বড় দৃষ্টান্ত।

নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ