ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৯ বাক্যে ১০ বানান ভুল, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশনার সময়: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৯

চট্রগ্রামের পটিয়ার হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালকের দফতরে এই বিভাগীয় মামলা রুজু হয়।

জানা যায়, নামমাত্র বেতনে কোনো প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই পটিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা লাওয়ারখীল বেসরকারি বানেস্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ফেরদৌস আরা বেগম শিক্ষকতা শুরু করেন। এক সময় এই বিদ্যালয়ে ১০/১৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। তখন ৫০০/১০০০ টাকা বেতনে কেউ ১/২ বছরের বেশি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন না। একটানা ওই স্কুলে থেকে যাওয়ায় কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে কোনো রকমে এইচএসসি পাস করা ফেরদৌস আরা বেগম হয়ে যান এই বিদ্যালয়ের পুরাতন শিক্ষক। সেই সুবাধে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই তিনি বনে যান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সরকার ২০১৩ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে যে অবস্থায় আছে সে সে অবস্থায় সরকারিকরণ করলে কপাল খুলে যায় ফেরদৌস আরা বেগমের।

সরকারি হওয়ার পর তিনি রশিদাবাদস্থ এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে তদবির করে বদলি হয়ে চলে আসেন নিজ গ্রামের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হিলচিয়া স্কুলে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাডেমিক অদক্ষতা, আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পাঠদানে অক্ষম ফেরদৌস আরা বেগমের নিজের হাতের ৯ লাইনের একটি বাংলা লেখায় প্রায় ১০ টি বানান ভুল করেন। পটিয়ার এমপি ও সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিষয়টি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কে নির্দেশ দেন।

বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তার স্বামী নুরুল ইসলামের সাথে তিনি সামাজিক বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের সাথে নিজেও জড়িয়ে পড়েন। মাঠের মাঝখানে খুঁটি গেড়ে স্কুলের সম্পত্তি বেদখল করার কাজে তিনি তার স্বামীকে সহায়তা করেন। এই ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমদ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের দিন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সভাপতিসহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সেদিনই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের একটি খাতায় বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেন। স্বামীকে সভাপতি করে পছন্দমতো কমিটি গঠনের জন্য তিনি অপতৎপরতা চালান।

প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট দফতরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিনকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম এর দফতরে এই বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। গত ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে তাকে ব্যক্তিগত শুনানি করার সুযোগ দেয়া হয়।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের একটা নাম-ডাক ছিল। ফেরদৌস আরা বেগম আসার পর থেকে স্কুলের লেখা-পড়ার মান তলানিতে নেমে এসেছে। যিনি শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজি পড়াতে পারেন না এমনকি যার বাংলা বানানে অহরহ ভুল থাকে তার কাছ থেকে ভালো কিছু আসা করা যায় না।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগম তার বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনকে মিথ্যা দাবি করে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের খেয়ে-ধেয়ে কোনো কাজ নেই। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু পেলেই দৌড়ে স্কুলে চলে আসে।

পটিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পেয়েছি। আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরবর্তী একটি তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার শুনানি কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আশা করি সপ্তাহ দশ দিনের মধ্যে রায় দেয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ