ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তালায় প্রকল্পের টাকা পকেটে, প্রকল্প যাচ্ছে নদে!

প্রকাশনার সময়: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২১:০৩

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মেলা বাজার এলাকায় কপোতাক্ষ নদে ভয়াবহ ভাঙনে বাইপাস পাকা রাস্তাসহ ভাঙন সংলগ্ন এলাকা ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দুইটি প্যকেজে- ৫৬ লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে পাইলিং ও মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তার সিংহভাগ নদী গর্ভে চলে গেছে। অতিসত্বর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যে কোনো সময় রাস্তা, মন্দিরসহ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বির্স্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কপোতাক্ষ নদে মেলা বাজার এলাকার ভয়াবহ ভাঙন থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাকা রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আপৎকালীন জরুরি প্যকেজে-১ এর মাধ্যমে গাছ দিয়ে পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাট করার জন্য ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ কেশবপুর নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভাঙন রোধে ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পাইলিং ও মাটি ভরাটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরও জানা যায়, কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙন থেকে পাকা রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আবারও আপৎকালীন জরুরি প্যকেজ-২ বালির বস্তার ডাম্পিংয়ে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজকে ২৭ লাখ টাকায় ৭ হাজার ২০০ বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, যার কাজ চলমান।

বুধবার কপোতাক্ষ নদের মেলাবাজার ভাঙন কবলিত এলাকায় সরেজমিন দেখা মেলেনি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো লোককের।

এ সময় ব্যবসায়ী কাশেম আলীসহ স্থানীয় লোকজন নদীর ওপারে বালুভর্তি বস্তাগুলো দেখিয়ে বলেন, কিছু বস্তায় বালি ভরাট করে রাখা হয়েছে। আর মেলা বাজার-মাঝিয়াড়া সংযোগ রাস্তার মুখে বালু ও আরও কিছু বালুভর্তি বস্তা এবং মোড়ের একটি দোকানের ভিতর রাখা হয়েছে।

এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ মেলা বাজার-মাঝিয়াড়া বাইপাস সংযোগ রাস্তাটি নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য পাইলিং ও মাটি ভরাটের জন্য সরকার ২৯ লাখ টাকা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের পাইলিং ও মাটি ভরাট করার কারণে সপ্তাহ না যেতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তাটি নদীতে চলে গেছে।

তারা বলেন, এখন শুনছি বালুর বস্তা দিয়ে নাকি ডাম্পিং করবে। সেখানে নাকি আরও ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এত টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরেও ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কখন যে মন্দিরসহ ঘরবাড়ি নদীতে মিশে যায় সেই আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালুর বস্তায় ১৭৫ কেজি করে বালু দেওয়ার কথা থাকলেও দিচ্ছে অনেক কম, তাই এই বালুর বস্তার ডাম্পিং কোনো উপকারে আসবে বলে মনে হয় না। এখন রাস্তার বাঁধ যেটুকু আছে সঠিকভাবে দ্রুত ডাম্পিং করে রাস্তাটি সংস্কার না করা হলে বাকি এলাকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল মতিন নয়া শতাব্দীকে বলেন, আপৎকালীন জরুরি প্যকেজ-১ এর পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ করেছেন। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তাটি নদীতে দেবে গেছে। এখন আপৎকালীন জরুরি প্যকেজ-২ এর মাধ্যমে ডাম্পিং করার কার্যাদেশ পেয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে ভাঙন এলাকায় ৫০০ বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। বালির বস্তা ভরাটের কাজ চলছে। আগামী ১৫ দিনের ভিতর বাকি বস্তাগুলো ফেলে ডাম্পিং এর কাজ শেষ করা হবে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিরুল ইসলাম জানান, তালা উপজেলার মেলাবাজারের সন্নিকটে কপোতাক্ষ নদের তীরে ভাঙন রোধে আপৎকালীন জরুরি প্যাকেজের আওতায় প্রথমে ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে গাছ ও বাঁশ দিয়ে পাইলিং করলেও সেটা টেকেনি। একই জায়গায় আবারও আপৎকালীন জরুরি প্যাকেজের ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭ হাজার ২শ বালুর বস্তা দিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ