ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সীতাকুণ্ডে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, বাড়ছে মশার উপদ্রব

প্রকাশনার সময়: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৩১

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসদরের নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। ময়লা-আবর্জনায় ড্রেনগুলো ভরাট থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন স্থানজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। অপরিচ্ছন্ন এসব ড্রেন স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য হুমকি হলেও সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ফলে মশার উপদ্রবও বাড়ছে।

সীতাকুণ্ড পৌরসদর এলাকা পর্যটন নগরীতে রূপ নেওয়ায় সারা বছরই আসছেন দেশি-বিদেশি পর্যটক। কিন্তু শহরে নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পর্যটকসহ ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী।

এদিকে পৌরসদরের বিভিন্ন স্থানে ড্রেন দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির ফেলা বর্জ্য ড্রেন উপচে একাকার হয়ে যায় রাস্তাগুলো। দীর্ঘদিন ড্রেন সংস্কার ও বর্জ্য অপসারণ না করায় দুর্গন্ধে সয়লাব নাগরিক জীবন। এতে ভেঙে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পৌর কর্তৃপক্ষও সেদিকে নজর দিচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড্রেন পরিষ্কার করলেও তারা লোক দেখানো পর্যায়ে আটকে আছেন।

পৌরবাসীর অভিযোগ, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও কর্তৃপক্ষ শহরের চাহিদামতো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করেননি। প্রায় ১০-১৫ বছর আগে এখানে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেইসব ড্রেনগুলো পুরোপুরি অপরিকল্পিত। অনেক ড্রেন হোটেল-মোটেল ও কটেজ ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে। বছরের পর বছর ড্রেনগুলো সংস্কার না করার কারণে নির্মিত ড্রেনগুলো ভেঙে রাস্তার সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই ড্রেন দিয়ে বর্জ্য নিষ্কাশন হয় না। বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পান না স্থানীয়রা।

এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য রাস্তার পাশে ছোট ছোট ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। আবর্জনা ও ময়লা পানি নিষ্কাশিত হয় এসব ড্রেন দিয়ে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এসব ড্রেনে ঢাকনা নেই। রাস্তার পাশে হওয়ায় ড্রেনগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। অন্ধকারে অনেকেই ড্রেনের অবস্থান বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া খোলা ড্রেনে জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক যুগ পার হলেও পৌরসদরের আমিরাবাদ কালি মন্দির সড়কের এই ড্রেনটিতে ঢাকনা লাগানো হয়নি। অপরিচ্ছন্ন ড্রেনগুলোতে সহজেই মশার উপদ্রব বাড়ছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ বিদ্যমান। তাই অপরিচ্ছন্ন ড্রেন সবার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ড্রেনে পানি জমাট হয়ে ডেঙ্গুর লার্ভা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, পৌরসভার নামার বাজার, আমিরাবাদ, সোবহান বাগসহ কয়েকটি এলাকায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে পলিথিন, কাগজ, কাপড়ের টুকরো আর প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিন জমে আছে কালো ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি।

অন্যদিকে, সব ময়লা আর পানি একত্রে মিশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আর তাতেই উড়ছে মশা। দেখা যাচ্ছে ময়লা পানিযুক্ত ড্রেনের দুপাশেই উচ্ছিষ্ট জিনিসপত্র পড়ে আছে। যেটি দেখলে ময়লা ফেলার স্থান মনে হয়। ড্রেনও ভরাট ময়লা-আবর্জনার স্তূপে। যেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ আর সৃষ্টি হয়েছে মশার উপদ্রব। রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনগুলো যেন মশার উপদ্রবের জন্য উপযুক্ত স্থান। চট্টগ্রামের অন্য উপজেলার চেয়েও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সীতাকুণ্ডে।

মুঠোফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দীন রাশেদ জানান, সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। সীতাকুণ্ডেও আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসলেই ডেঙ্গু টেস্ট করানো হচ্ছে। আমরাও স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বাড়ির উঠানে গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ করছি। তবে, নালা-নর্দমায় তিনদিনের বেশি পানি জমা থাকলে ডেঙ্গুর লার্ভা জন্ম নিবে। তাইতো আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখুন।

পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন, মশার লার্ভার ওষুধ দিচ্ছি এবং ধোঁয়া স্প্রে করছি। এছাড়া পৌর এলাকা পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার আমিরাবাদসহ যেসব এলাকায় এমন পানি জমাট হওয়া ড্রেন থাকে সেটি আমি খবর নেব। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম রফিকুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে উপজেলা প্রশাসন। যাতে ডেঙ্গুর হার কমানো যায়। পৌরসভা থেকে যেসব সেবা পাচ্ছেন না সে সব বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নালা-ড্রেন পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নয়া শতাব্দী/এসএ/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ