ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৭ বছর ধরে এক প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে কাজ দেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৭:১২

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে ডাস্টবিনের পলিথিন সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিমাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পলিথিন সরবরাহ তো দূরের কথা, কোনো কোনো স্টেশনে ডাস্টবিনেরই দেখা মেলেনি।

জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ ও সার্ভিসিং এবং সংরক্ষণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের সঙ্গে ওয়াহদিকা সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এজন্য ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে মাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এ কাজের জন্য দুই বছর পর পর নতুন টেন্ডার আহ্বান করার নিয়ম থাকলেও গত ৭ বছর ধরে একটি প্রতিষ্ঠানই কোনো টেন্ডার আহ্বান না করে নবায়নের মাধ্যমে রেলওয়ের বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে কোনো পলিথিন সরবরাহ করা হয় না। ডাস্টবিনে পলিথিন ছাড়াই ময়লা ফেলতে দেখা গেছে যাত্রীদের। যাত্রীরা যে যার মতো করে খাওয়া শেষে ময়লা ফেলে চলে যাচ্ছেন।

ওয়াহদিকা সার্ভিসেসের কোনো কর্মচারীকে ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ করতে দেখা যায়নি। কোনো স্টেশনে ৫টি আবার কোনো স্টেশনে ১০টি পর্যন্ত ডাস্টবিন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেখানে একটি করে পলিথিন থাকার কথা থাকলেও সেটি দেখা যায়নি। এ কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রতি ডাস্টবিনে মাসে ১ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এসব স্টেশনে ডাস্টবিনের দেখা মিললেও পলিথিনের দেখা মেলেনি।

যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনে ডাস্টবিন থাকলেও ময়লা যথাসময়ে সংগ্রহ করা হয় না। যার কারণে অনেক সময় ডাস্টবিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। যদি ডাস্টবিনের ময়লা সংগ্রহের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা পরিশোধ করে থাকে তাহলে তা অপচয় হয়ে যাচ্ছে।

ষোলশহর স্টেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ষোলশহর স্টেশনে আমরা পলিথিন তো দূরের কথা ডাস্টবিনের দেখাই পাইনি। স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। ময়লা সংগ্রহের জন্য যে রেলওয়ে টেন্ডার দিয়েছে, তা শুনে অবাক হয়েছি।

শুধু তাই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামে বেডিং পোর্টার সরবরাহের জন্য প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে টেকনোক্রেটস নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কাজের জন্য শ্রমিক প্রয়োজন হয় ৯ থেকে ১০ জন। কিন্তু টেকনোক্রেটস নামের প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ৩২ জন শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে অতিরিক্ত মজুরি গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে অলিউর রহমানের প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই লন্ড্রি ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে বার বার নবায়ন করার সুযোগ দিচ্ছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা।

এ টেন্ডার নবায়নের জন্য ভাই ভাই লন্ড্রি ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসের মালিক অলিউর রহমান মাসে বড় অংকের টাকা মাসোয়ারা দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামকে। তাই বিনা টেন্ডারে ওই প্রতিষ্ঠানকে নবায়নের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আসতে পারে। যা চলছে ভালই চলছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমাদের তদারকিরও কোনো ঘাটতি নেই।

রেলওয়ের সঙ্গে এমন চুক্তির বিষয়ে জানেন না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি আপনার কাছে কোন ডকুমেন্টস থাকে আমাকে দেন। আমি বিষয়টি দেখব।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ