ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোহিঙ্গাদের আকুতি শুনলো মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দল 

প্রকাশনার সময়: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ২০:০১

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আকুতি শুনলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। নাগরিকত্ব ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার হাত বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আকুতি নিয়ে আহবান জানান রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে তাৎক্ষনিক কোন কথা না বললেও রোহিঙ্গাদের আবেদন ও নিবেদনগুলো মনযোগ দিয়ে শুনেন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এমনটি জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সাথে থাকা ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেমে আইএসসিজির অফিস হয়ে ক্যাম্পে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস ও রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছায় এবং প্রায় ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান করেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) মো. আমির জাফর জানান, কংগ্রেস প্রতিনিধি দল প্রথমে উখিয়ার বালুখালীস্থ ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে যান। সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় শেষে রোহিঙ্গাদের ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম তদারকি করেন এবং ডাটা কার্ডের বিভিন্ন সুবিধা নিতে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এপিবিএন সদস্যরা প্রতিনিধিদলের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত পরির্দশনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) সৈয়দ হারুনুর রশীদ জানান, বালুখালীস্থ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কুতুপালং ১১ নম্বর ক্যাম্পের সি/১ ব্লকে অবস্থিত ইউএস অর্থায়নে পরিচালিত সান লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে মায়ানমার ক্যারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি তদারকি করেন। এরপর ডাব্লিউএফপির ই-ভাউচার আউটলেট এবং রোহিঙ্গারা ডাটা কার্ডের মাধ্যমে কিভাবে রেশন গ্রহণ করে তা পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন স্টোর পরিদর্শন করেন।

পরে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইউএনএইচসিআর-এর উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আইন সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ এবং রোহিঙ্গাদের যে সকল আইনগত সেবা প্রদান করা হয় তা তদারকি করেন। সবশেষে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এসময় রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার হাত বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আকুতি নিয়ে আহবান জানান। বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করেন তারা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, সোমবার সকাল নয়টায় মার্কিন কংগ্রেসের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরনার্থীরদের সমন্বয় সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের অফিসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)সহ ইউএন’র বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে প্রতিনিধি দল উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা ক্যাম্পে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সাথে সরাসরি আলাপ করেন। বিকেলে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসে এসে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠত করেন। কংগ্রেস প্রতিনিধি দল সফরকালে রোহিঙ্গাদের আর্থিক অবস্থাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে উল্লেখ করেছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই এখানে ছিল আরও কয়েক লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা। ফলে সব মিলিয়ে এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১২ লাখের বেশি।

মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বর্তমানে বিশাল এই জনগোষ্ঠী নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার বারবার আশ্বাস দিলেও একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়নি। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার অবস্থা দেখতে বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানীয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রায় ক্যাম্পে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দলও ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন সোমবার।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ