ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

একই ভবনে বিদ্যালয়-পুলিশ ফাঁড়ি, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৪২

বিদ্যালয় ভবনের দোতলায় পুলিশ ফাঁড়ি আর নীচতলায় চলে পাঠদান। পুলিশের নানা কার্যক্রমের সময় শিশুরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পাঠদানে অংশ নেয়। রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। ২০ বছর ধরে এভাবে চলছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ১১১ নং উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ২০০৩ সালে বিদ্যালয় ভবনে স্থানান্তর করা হয় সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। গত ২০ বছরেও তারা ভবনটি ছেড়ে দেননি।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের হালইসার এলাকায় হালইসার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। প্রথম দিকে একটি টিনসেটের ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলত। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সরকারি একটি প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য দ্বিতল একটি ভবন নির্মাণ করে। ভবনের প্রতি তলায় ৪টি করে কক্ষ নির্মাণ করা হয়।

পদ্মা নদীর তীরে সুরেশ্বর বাজারে সুরেশ্বর নৌপুলিশ ফাঁড়ি ছিল। ২০০২ সালে পদ্মার ভাঙনে তা বিলীন হয়ে যায়। এরপর ওই বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে হালইসার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম সরিয়ে আনা হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দিতে ৪টি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ ও একটি স্টোররুম প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ের দোতলাটি নৌপুলিশের দখলে থাকায় নীচ তলার ৪টি কক্ষে সকল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নৌপুলিশ যখন অভিযান চালায় তখন একসঙ্গে অনেক আসামি ধরে আনেন। তাদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়। তাদের চিৎকার- চেচামেচিতে শিশুরা ভয় পায়। তখন শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করাতে হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামসেদ আলী বলেন, পুলিশের কাজ অপরাধীদের নিয়ে। অপরাধী ধরে আনার সময় নানা ধরণের আচরণ করা হয়। যা দেখে শিশুরা ভয় পায়। আতকে ওঠে। এতে বাচ্চাদের মানসিক প্রভাব পড়ে। আসামিদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়, তারা পালানোর চেষ্টা করেন। তখন হুলুস্থুল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নীচতলার দুটি কক্ষে ও স্টোররুমে পাঠদান করানো হচ্ছে। একটি কক্ষে শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা। আর দোতলার চারটি কক্ষের একটিতে নৌপুলিশ ফাঁড়ির অফিস কক্ষ। আর তিনটি কক্ষের মধ্যে তাদের মালামাল ও রাত্রিযাপন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই তিনটি কক্ষের একটিতে ফাঁড়ির ইনচার্জ ও দুটি কক্ষে পুলিশের ১২ সদস্য থাকেন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগী আক্তার ও আল হাসান জানায়, পুলিশ যখন কোন আসামি ধরে বেঁধে নিয়ে আসে তখন তারা ভয় পায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, বিদ্যালয় ভবন থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেয়ার অনেক তাগিদ দিয়েছি। নৌপুলিশের এসপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক বার চিঠি দিয়েছি। কোনো ফল হয়নি। এভাবে একই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি ও স্কুলের কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়। এলাকার সচেতন অভিভাবক তাদের সন্তানদের এ স্কুলে ভর্তি করান না। যার কারণে বিদ্যালয়টিতে কাঙ্খিত শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি আর বিদ্যালয় একই ভবনে চালানো হচ্ছে ২০ বছর ধরে। এটা জেনে অবাক হয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে মানসম্মত পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোন পক্ষই পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ভূমিকা নিচ্ছেন না।

নৌপুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের হাতে কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয়ের ভবনের দোতলায় পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পদ্মা নদীর তীরে সুরেশ্বর বাজারের পাশে একটি জমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভবন নির্মাণ হলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। ওই প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা একটি ভাড়ার বাড়ি খুঁজতেছি। তা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ