ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কক্সবাজারে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পাহাড় ধসের শঙ্কা

প্রকাশনার সময়: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৪৯ | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৬:০০

দুইদিন টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বাঁকখালী নদীসহ কয়েকটি খালের পানি বেড়ে এবং বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার জেলার শতাধিক গ্রাম। দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কাও। এ ছাড়াও কয়েকটি উপজেলার অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

রোববার বেলা ১২ থেকে থেকে সোমবার (৭ আগস্ট) বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে কক্সবাজারে ফের দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কাও।

টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় কক্সবাজার সদরের ১০ গ্রাম, মহেশখালী উপজেলার ১৫ গ্রাম, কুতুবদিয়া উপজেলার ১৫ গ্রাম, চকরিয়ার ২০ গ্রাম, উখিয়ার উপজেলার ১০ গ্রাম, রামু উপজেলা ২০ গ্রাম ও টেকনাফের ১০ গ্রাম। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়াও ঢল ও বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেঙে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। এতে জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তলিয়ে গেছে কৃষি ফসল ও চিংড়ি ঘের।

তবে যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (সাধারণ) বিভীষণ কান্তি দাশ।

আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান, শনিবার রাত থেকেই অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাত ১২ থেকে রোববার রাত ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ৯৮ মিলিমিটার। বৃষ্টির তীব্রতা থাকবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

তিনি আরও জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়গুলো কিছুটা আলগা হয়ে পড়ে। কয়েকদিন ধরে যে ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে আমাদের পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আছে।

তার মতে, পাহাড় ধস যতটা না প্রাকৃতিক, তার চেয়ে বেশি মানবসৃষ্ট। কারণ পাহাড়ে বাড়ি বানানো বা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে এ দুর্যোগ হয়। হঠাৎ বৃষ্টি এলে সমস্যা হয় না, তবে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড় ধসে পড়ে। আবহাওয়া অধিদফতর প্রতিবারের মতো এবারও পাহাড় ধসের পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করছেন।

সূত্র জানায়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে সারা বছর কোনো ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। অথচ প্রতিবছর বর্ষা শুরু হলেই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। এ ঘোষণাও মাইকিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় পাহাড় ধসে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন দায় এড়ানোর জন্য কোনো রকমে মাইকিং কিংবা জরুরি মিটিং করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে।

এদিকে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোনো মূহুর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানি। এ আশঙ্কায় এ বছরও লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন। স্বেচ্ছায় না সরলে অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, অতি বর্ষণে জেলার মিঠাপানির তিন নদী চকরিয়ার মাতামুহুরি, ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী ও কক্সবাজারের বাঁকখালীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢলের তীব্রতায় ভেঙে যাওয়া ঈদগাঁওর রাবার ড্যাম এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বৃহত্তর ঈদগাঁওর জালালাবাদ, ঈদগাঁও, চৌফলদন্ডী, পোকখালী ও ইসলামাবাদ এলাকার অর্ধশত গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠ। ভেঙে গেছে আঞ্চলিক সড়কগুলো।

এ ছাড়া কক্সবাজার শহরসহ চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, রামুসহ বেশ কয়েক উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে ওসব এলাকাগুলোতে কোমর সমান পানি জমে গেছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ধসে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরাতে কাজ চলছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রবল বর্ষণের মাতামুহুরীর নদীর পানি বেড়ে চকরিয়া উপজেলার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড এবং সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, কোনখালী, ঢেমুশিয়া, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, সাহারবিল পুরোসহ ১৭ ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, রাজাখালী, মগনামাসহ সবকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এসব স্থানের অনেক লোকজন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়কেন্দ্র ও ইউপি ভবনসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

বাঁকখালী নদীর পানি উপচে পড়ে রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপ, জোয়ারিয়ানালা, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রাজারকুল ও ফতেখাঁরকুলে ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ি কাটিরমাথা এলাকায় অতিরিক্ত পানি বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফ কক্সবাজার সড়কের যোগাযোগও ব্যহত হচ্ছে।

কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়া, টেকপাড়া, বাহারছড়া, আলীরজাহালসহ আরো বিভিন্ন ওয়ার্ড কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়কে কোমর সমান পানির কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।

জালালাবাদের প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান সরোয়ার ডিপো জানান, জালালাবাদ ইউনিয়নে রাশেদ চেয়ারম্যানের এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙনে ও ঢলের পানিতে কয়েকটি গ্রাম পানিবন্দি রয়েছে।

মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু জানান, প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ধলঘাটার কয়েকটি গ্রামের সড়কের ওপর পানি ওঠে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধানের বীজতলা, পানের বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন টিপু সুলতান বলেন, নিচু এলাকায় প্রতি বছর বন্যা দেখা দেয়। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্ব প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (সাধারণ) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ করা হবে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন পক্ষ থেকে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে। পরিস্থিতি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ