দুই সন্তান আর সংসার সামলে স্বামীর প্রবল ইচ্ছা, অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসায় ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার লাবনী।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছ্যাংগারচর পৌরসভার উত্তর সিকিরচর গ্রামের আবদুল খালেক মিজি ও তাসলিমা বেগম দম্পতির সন্তান লাবনী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়। স্বামী ফকরুজ্জামান আরিফ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
লাবনী পড়ালেখা শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের পাগলার আহসান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং মেধাতালিকায় বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পান। এরপর ভর্তি হন দনিয়া কলেজে। ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে একই বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পান লাবনী। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে ২০১৬ সালে স্নাতক ও ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে ২০১১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের পূর্ব লালপুর গ্রামের নাজির সাহেবের বাড়ির রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে ফকরুজ্জামান আরিফের সঙ্গে বিয়ে হয় আয়েশা আক্তার লাবনীর। আরিফ দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সুনামধন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। হাজারো ব্যস্ততায় সবসময় স্ত্রীকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন তিনি। এ দম্পতির দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে।
আয়েশা আক্তার লাবনী বলেন, ‘২০১৭ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরির পেছনে না ঘুরে বিসিএস দেওয়ার চেষ্টা করি। এতে নানান জনের নানা কথা শুনতে হয়। ওই সময়ে ঘরে বসে শুধু পড়াশোনা করি। স্বামী ও পরিবারের প্রেরণায় ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা দিই। এতে তেমন লাভ হয়নি। তবে অভিজ্ঞতা হয়। সেই অভিজ্ঞা কাজে লাগিয়ে সদ্য ঘোষিত ফলাফলে ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যে কোনো সফলতায় একজন বন্ধু পাশে থাকা দরকার। সে দিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান। কারণ আমার স্বামী আগে আমার বন্ধু তারপর স্বামী। তার সব সময় বিশ্বাস ছিল একাডেমিক সফলতার পাশাপাশি বিসিএসে ভালো করতে পারব।’
লাবনী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের মানুষের জন্য কিছুর করার। সেই আগ্রহকে পুঁজি করেই এগিয়ে চলি। ২০১১ সালে আমার বিয়ে হওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে আমার পথ চলা। ২০১৩ সালে আমার বড় মেয়ের জন্ম হয় এবং ২০২০ সালে আমার ছোট মেয়ের জন্মের পর তাদের সঙ্গে নিয়েই আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিসিএস যাত্রা চালিয়ে যাই।’
লাবনীর স্বামী ফকরুজ্জামান আরিফ বলেন, আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন আল্লাহ পূরণ করেছেন। লাবনী পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে। আমার দুটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ে ও পরিবারের সবাইকে সামাল দিয়ে এই জায়গায় আসা, এটা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে পড়াশোনা করেছে সে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। সে যেন আরও বড় হতে পারে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ