ভরা বর্ষা মৌসুমেও আকাশে ঘন কালো মেঘ কিংবা ঝুম বৃষ্টি নেই। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত খালবিলে তেমন পানি আসেনি, ভরেনি নদ-নদী। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠের খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবায় তেমন পানি জমেনি। অনাবৃষ্টি ও বর্ষায় চলনবিলে আসা সামান্য পানি যা ছিল, তাও কমতে শুরু করছে। এরই মধ্যে কৃষকরা পাট কাটা শুরু করেছেন। কিন্তু পানির অভাবে সেই পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাসহ চলনবিলের কৃষকরা।
গুরুদাসপুর উপজেলার নিম্ন এলাকায় অল্প কিছু পানি থাকলেও উচু এলাকার কৃষকরা পড়েছেন বেশি ভোগান্তিতে। আশপাশের দুই-একটি নদীতে সামান্য পানি থাকলেও তা কচুরিপনায় ভরা। ছোট বড় কিছু খালবিল থাকলেও বৃষ্টি এবং পানি না থাকায় গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছেন দূরবর্তী এলাকায় জাগ দেওয়ার জন্য। কেউবা আবার টাকা এবং শ্রমিকের অভাবে পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে মাথায় করে পাট বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। অনেকেই উপায়ান্ত না পেয়ে পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশই জমিতে পড়ে রয়েছে পাট। বৃষ্টির আশায় অনেকে পাট কাটা শুরু করেছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় নিরূপায় হয়ে বোঝা বেঁধে পাট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাস্তায়। সেখান থেকে নসিমন, অটো ভ্যান যোগে জাগ দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চলনবিলে। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
আবার কেউ কেউ পানির অভাবে নিচু জায়গায় জমে থাকা সামান্য পঁচা পানিতে জাগ দিচ্ছেন পাট। এতে ফলন ভালো হলেও পাটের আঁশ সোনালি না হয়ে কালো রঙের ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর বাজারমূল্য অনেক কম হওয়ায় ভালো দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এছাড়াও পাট বপন থেকে শুরু করে নিড়ানো, পাট বাছাই করা, কাটা, পঁচানো-শুকানোর সাথে যোগ হয়েছে পাট বহনের খরচও। এসকল বিষয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন উপজেলাসহ চলনবিলের কৃষকরা। পাটের ন্যায্য দাম না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের কৃষক মো. জামাল প্রামাণিক জানান, বানের পানি না থাকার কারণে সড়কের খাদে জমা পঁচা পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। কম পানিতে জাগ দেওয়া পাটের আঁশ কালো ও চটাচটা হয় বলে জানান।
তিনি আরও জানান, পাটের ফলন এবার ভালো হলেও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে ভালো আঁশ ও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তার মতো অনেক কৃষক।
মো. হোছেন আলী, মো. বক্কার প্রামাণিকসহ কয়েকজন পাটচাষি জানান, এক বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদিত হয়। আগে পাট রোপণ থেকে পাট থেকে আঁশ বের করতে খরচ হতো ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। সেই খরচ বেড়ে এ বছর ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পযর্ন্ত হচ্ছে। তাই বাজারে পাটের নায্য মূল্য না পেলে আমাদের এবার লোকসানে পড়তে হবে। এতে পাট চাষে আগ্রহ হারাবে অনেক কৃষক।
এদিকে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় হাটে গিয়ে দেখা যায় নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ভালো পাট ২ হাজার থেকে ৯০০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তথ্য মতে জানা যায়, এ বছর নাটোর জেলাতে ৩১ হাজার ৭ শত ৪৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলাতে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাট চাষ বাড়াতে জেলার ১০ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে পাট বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলাতে ১৩০০ জন কৃষক পেয়েছেন এ সুবিধা। এবছর রোগ বালাই কম হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পাট জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, চলতি বছরে পাটের ফলন ভাল হয়েছে। অনাবৃষ্টি ও বর্ষা না হওয়ায় পাট জাগে কৃষকদের খরচ বেড়েছে। বাজার মূল্য বেশি হলে খরচ পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা। এ বছর এ উপজেলাতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৫০ মণ। যা থেকে অর্জিত হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
নয়া শতাব্দী/এসএ/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ