অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা হয়নি। জীবিকার তাগিদে ছোটবেলায় জেলে পেশা বেছে নেন। খাল-বিল থেকে মাছ শিকার করতেন এবং অন্যের মৎস্য খামারেও শ্রমিকের কাজ করেছেন। সেই সময়ে থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ।
হাড়ভাঙা খাটুনির শ্রমে মাটির ব্যাংকে জমানো পাঁচশ টাকায় ১৯৯৫ সালে মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর ভাড়া নেন যতীন্দ্র বর্মণ। এরপর আর পেছনে তাকানে হয়নি। মাছ চাষের আয়ে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র।
চলতি বছর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে রেণু পোনা উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পদক পান যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। গত ২৫ জুলাই রাজধানী ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে জাতীয় মৎস্য পদক (ব্রোঞ্জ) তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী।
গৌরীপুর-রামগোপালপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাহাদুর গ্রামে রয়েছে যতীন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হ্যাচারির পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছেন যতীন্দ্র। কয়েকজন কর্মচারী মিলে করেছেন পুকুর ও হ্যাচারির চৌবাচ্চা পরিচর্যার কাজ।
একটি পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে এখন ২৫টি পুকুর রয়েছে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের। তার হ্যাচারিতে রুই, কাতল, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কার্ফু, কালিবাউশ সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করা হয়।
স্থানীয়দের খামারিদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০ জন খামারি নিয়মিত এই হ্যাচারি থেকে নিয়মিত মাছের পোনা ও রেণু সংগ্রহ করেন। তাই বছর শেষে ভাল লাভের মুখ দেখেন তিনি। করেছেন জমি ও বাড়ি।
যতীন্দ্রের বয়স এখন বাষট্টি। মাছ চাষের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যাত্রাশিল্পী হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছেন। মাছ চাষে বেকার যুবকদের উদ্বুব্ধ করতে গান ও নাটিকা লিখেছেন। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এগুলো বিভিন্ন সেমিনারে প্রচার করেন।
১৯৭৫ সালে তার গান শোনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জমিদার রুহিনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী তাকে পৌর শহরের বাগানবাড়ি একখণ্ড জমি উপহার দেন। সেই জমিতেই বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এখন এ মাছচাষি।
যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, ছোটবেলায় খাল-বিলে মাছ শিকার করার পাশাপাশি হ্যাচারিতে কাজ করতাম। সেখান থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখা। শুরুটা কঠিন হলেও পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি। পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার। মাছ ও গান আমার নেশা। এগুলো নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সর্বশেষ যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদন করতেন। আদর্শ এই মাছচাষি জাতীয় মৎস্য পদক সম্মানা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি আরো ভালো কিছু করে সুনাম বয়ে আনবেন এটাই প্রত্যাশা।
নয়াশতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ