ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘বন্দুকযুদ্ধে’ শেষ হলো আরসার শীর্ষ কমান্ডার হোসেন মাঝির অধ্যায়

প্রকাশনার সময়: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:৩৩

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে এপিবিএনের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

সোমবার (১০ জুলাই) ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই দিন ভোরে ১৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ-৭৯ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম হোসেন মাঝি। তিনি আরসার শীর্ষ কমান্ডার ও তার নেতৃত্বে পাঁচটি ক্যাম্প পরিচালিত হয় বলে দাবী করেছেন পুলিশ।

অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানান, আজ সোমবার ভোরে ৮ নাম্বার ক্যাম্পে নিয়মিত অভিযান চালানোর সময় হঠাৎ সংবাদ আসে ক্যাম্প ১৭ তে আরসা সন্ত্রাসীরা হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সময় সেখানে গেলে অতর্কিত গুলি চালায় এপিবিএনের ওপর। পরে এপিবিএনও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এলাকাটি। পরে ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুইটি অস্ত্র, আট রাউন্ড গোলাবারুদ ও একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোর ৬ টার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ ইস্ট,ব্লক-বি-১৭-১৮ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা ঘুমন্ত আরএসও সদস্যদের মারতে এসে উল্টো আরসার ৬ সদস্য নিজেরাই কুপোকাত হয়েছে বলে দাবি একাধিক অসমর্থিত সূত্রের। এতে আরসার কমান্ডার নজিবুল্লাহসহ নিহত হন।

সূত্র মতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। আইসিসি টিম চলে যাওয়ার একদিন পর এ গোলাগুলির ঘটনাকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নির্যাতিতদের ডাকতে গিয়ে মো. এবাদুল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা সাব মাঝি (নেতা) ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের দাবি, অধিকার নিয়ে কাজ করতে গঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে আরএসও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার বিষয় ও অধিকার নিয়ে কাজ করে। আর ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে আরসা। আরসার নিয়ন্ত্রণে থাকা সন্ত্রাসীরা মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে কাজ করছে। প্রত্যাবাসনের আগ্রহী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তারা।

বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের ক্যাম্প সফর ও বিচার কার্যক্রমের সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে এ হামলা বলে ধারণা রোহিঙ্গাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোলাগুলির বিষয়ে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন সদস্য ও রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বলেন, শুক্রবার ভোরে আরসার অন্তত ৪০-৫০ জনের একটি সশস্ত্রদল ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে ঘুমন্ত আরএসও সদস্যদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু আরএসওর সদস্যরা আগে থেকে এ হামলার খবর পেয়ে ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়। ভোর ৫টার দিকে আরসার সদস্যরা ক্যাম্পে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের চারদিক থেকে ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে আরএসওর সদস্যরা। এতে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী গুলিবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে দু’পক্ষই পালিয়ে যায়।

এর আগেও ক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একইভাবে গোলাগুলিতে অসংখ্য নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের অক্টোবরে উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদরাসায় ঘুমন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ব্রাশফায়ার করেছিল দুর্বৃত্তরা।

এ সময় তিনজন শিক্ষক ও এক ছাত্রসহ ছয়জন নিহত এবং কমপক্ষে ১২ জন আহত হন। কয়েকজনকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে হামলাকারীরা। এরপর একসঙ্গে দুজনের বেশি খুনের ঘটনা ঘটেনি।

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ