ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
টাঙ্গাইলে যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন

‘ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’

প্রকাশনার সময়: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৬:৫৭

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও লাগাতার ভারী বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর বাম তীর বরাবর বেশ কয়েকটি উপজেলায়। এতে চলতি বছর অন্তত তিন শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখনও হুমকির মুখে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ। চোখের সামনে নিমিষেই ভেঙে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙন কবলিত মানুষদের। সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, আবার অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। অসহায়ভাবে নিরবে ভাঙন দেখছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো। তাদের দাবি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ততরা ত্রাণ চায় না, চায় ভাঙন প্রতিরোধে সুরক্ষা একটি বাঁধ। ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়রা জানায়, বর্ষায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলের সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতি ও নাগরপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায়। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে ভূঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া, চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা। ঈদের দিন থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে তাদের সহায় সম্বল। ঈদের আনন্দ উপভোগ করার পরিবর্তে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। একই অবস্থা টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলী নামক এলাকার। বর্ষার শুরু থেকেই ভাঙনের কবলে পড়েছে এখানকার বাসিন্দারা। এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে এ এলাকার অন্তত শতাধিক বাড়িঘর ও কয়েকশত একর ফসলি জমি। গৃহহীন হয়েছে হাজারো মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল এলাকাসহ অর্ধশত গ্রামে যমুনার তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি।

নদী ভাঙনের শিকার উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে করে এক দিনেই আমার বসতভিটা যমুনা নদী গিলে খেয়েছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে বহু আগেই। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার থাকার জায়গাটুকুও আর নেই। ৫ ও ১০ কেজি চাল দিয়ে কি করব। এসব দরকার নেই। আমরা ভাঙন কবলিতরা ত্রাণ চাই না, ভাঙনরোধে বাঁধ চাই।

একই গ্রামের জামাল উদ্দিন নামে আরও একজন বলেন, আমরা নদী ভাঙন এলাকার মানুষ। চোখের সামনে বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। যারাই আসে তারা শুধু দেখে চলে যায়। আর বলে আগামী বছরই বাঁধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু ফের বন্যা আসে, শুরু হয় ভাঙন। প্রভাবশালীরা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় জিও ব্যাগ ফেলে। আমাদের বসত-ভিটা রক্ষায় কেউ কথা রাখে না। অন্যের জায়গায় থাকতে হচ্ছে।

গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক সপ্তাহ চিতুলিয়াপাড়ায়, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া ও গোবিন্দাসীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোবিন্দাসীর ইউনিয়ন নদীপাড়ের মানুষ। গত শনিবার আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার গোবিন্দাসী, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী ও পাটিতাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যমুনা নদীর বামতীর বরাবর ভাঙন রোধে বেশ কিছু পদক্ষে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এর বাইরে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ