ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

যুবকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে দেলোয়ার-মনিরের মাল্টা বাগান

প্রকাশনার সময়: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৫:২৯ | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪২

দেলোয়ার হোসেন শেখ ও মো. মনির দপ্তরির বিশাল বাগানের ছোট-বড় গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। ২০১৯ সালে দেলোয়ার ও ২০২০ সালে মনির মাল্টা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে দুজনেই মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন। তাদের দেখে এলাকা শিক্ষিত যুবকরা মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কৃষক মনির গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৩০০টি বারি জাত-১ মাল্টার চারা সংগ্রহ করে একর সমতল জমিতে রোপণ করেন। এখন দেলোয়ার ও মনিরের বাগানের প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মাল্টা। বাতাস উঠলেই তালে তালে দোল খাচ্ছে মাল্টাগুলো।

দেলোয়ারের সাড়ে তিন একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ মাল্টা বাগান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের ডুবাইল গ্রামে অবস্থিত। আর জয়ধরখালী গ্রামের মনির দপ্তরির মাল্টা বাগানটি ওই গ্রামেই অবস্থিত। ২০২০ সালে মাল্টা চাষ শুরু করেন তিনি। তাদের বাগানে ঢুকতেই মাল্টার শোভা দেখে মন ভরে যায়। মাল্টা চাষ করে এখন সফল দেলোয়ার ও মনির। তাদের উদ্যোগ ও সাফল্য দেখে শিক্ষিত যুবকরা মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে ফলের বিশাল বাজার রয়েছে। কিন্তু যেসব ফল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হয়, তা সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয়ে থাকে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তবে দেলোয়ার হোসেন ও মনির নিরাপদ উপায়ে মাল্টা উৎপাদন করছেন। কৃষিতে মনোনিবেশ করে তারা সকলের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মনির প্রথমে লেবু বাগান করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। সেই নেশা পিছু ছাড়েনি তার। তাই লেবু বাগানের পাশাপাশি মাল্টা বাগান করার ইচ্ছে ছিল তার। পরে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে তিন শতাধিক চারা পেয়ে গড়ে তোলেন মাল্টা বাগান। সেটি ২০২০ সালের কথা। এখন তার বাগানের সবগুলো গাছেই ধরেছে মাল্টা। অপর কৃষক দেলোয়ার ২০১৯ বিশাল মাল্টা বাগান গড়ে তোলেন। এখন তার বাগানজুড়ে ১৪’শ সাড়ি সাড়ি মাল্টা গাছ। প্রায় সবগুলো গাছেই ঝুলছে মাল্টা। একেকটি গাছে ৩৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত মাল্টা ধরে আছে।

দেলোয়ার ও মনির জানান, থোকায় থোকায় মাল্টাগুলো তাদের কাছে স্বপ্ন। বর্তমানে তাদের বাগানের প্রতিটি গাছে গাছেই মাল্টা ধরেছে। আগামী মৌসুমে দ্বিগুণ ফলন হবে বলে আশাবাদী তারা।

মনির জানান, তাকে গফরগাঁও উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন সর্বদাই সহযোগিতা

করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ বলেন, মাল্টা এক সময় বাংলাদেশর পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও এখন আর পাহাড়ে সীমাবদ্ধ নেই। মাল্টা গাছ দীর্ঘ বছর ধরে ফল দিয়ে থাকে। প্রতি মৌসুমে পর্যায়ক্রমে মাল্টা গাছে ফলন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ জন্য সঠিকভাবে গাছের পরিচর্চা ও যত্ন নিতে হয়। মাল্টা বাগান করে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন দেলোয়ার ও মনির।

লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. ফারুক আহমদ বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে ২০১৯ সাল থেকে মাল্টা, কমলা, বাতাবি লেবু এবং লেবু এ চারটি ফসলের আবদ সম্প্রসারণ শুরু হয়েছে। মাল্টা এবং কমলা আমদানি করতে গিয়ে আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করি, সেগুলোর সাশ্রয় ঘটানোই হলো এক প্রকল্পের উদ্দেশ্যে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০টি জেলাধীন ১২৩টি উপজেলায় কৃষকদের বিনামূল্যে মাল্টা, কমলা ও বাতাবি লেবুর কলম চারা দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে চারা রোপণের জন্য দক্ষভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। তা ছাড়াও তাদের জৈব ও রাসায়নিক সার বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেলোয়ার একজন অগ্রবর্তী কৃষক। তিনি নিজ উদ্যোগে সাড়ে তিন একর জমিতে মাল্টা আবাদ করেছেন। তার বাগানের সার্বিক অবস্থা ভালো। আশা করছি এ বাগান থেকে তিনি অনেক মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন এবং আথিকভাবে অনেক লাভবান হবেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেশের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবো।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ