যেখানে কয়েকদিন আগেও ছিল সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার স্বপ্ন। ছিল ভিটামাটি, বসতঘর, ফসলি জমি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল আর আসবাবপত্র। মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক তখনই উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে দুই নম্বর সলিট স্পারের একটি অংশ এক বিকট শব্দে ভেঙে যায়। ফলে লন্ডভন্ড হয়েছে যায় মানুষের সব স্বপ্ন।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গত রোববার গভীর রাতে ভেন্ডাবাড়ী কুটিপাড়া এলাকার তিস্তা ডানতীর বাঁধের সলিট স্পারের ৪০ মিটার পানির তোড়ে ভেঙে পড়ায় তিস্তার নতুন চ্যানেলটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই চ্যানেলের তীব্র স্রোতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তির্ণ এলাকা। ভয়াবহ ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কুটিপাড়া এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা আর ফসলী জমি। ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, ধান-চাল, গরু-ছাগল আর আসবাবপত্র।
সব কিছু হারিয়ে এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছে তিস্তার ডানতীরের প্রধান বাঁধ, উচু স্থান ও নিকট স্বজনের বাড়িতে। অনেকে ভাঙনের কবল থেকে বাঁচানো দু-একটি ঘর নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন অন্যের জমিতে। খাদ্য ও নিরাপদ পানি সংকটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে কাটানো দিনগুলো আজ বিবর্ণ।
এদিকে ভেন্ডাবাড়ী কুটিপাড়া এলাকা ছাড়াও খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামতের চরবাসী, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের উত্তরখড়িবাড়ি ও দোলাপাড়া এলাকার ফসলি জমি তিস্তা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে। এতে ওই এলাকার তিন হাজার ২২০টি পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে ভাঙন রোধে চলছে বাঁশের পাইলিং ও বালুর বস্তা ফেলার কাজ।
ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, স্পার বাঁধ ভেঙে পানির স্রোতে সবকিছু হারিয়ে দুই শতাধিক পরিবার এখন চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। নিজ উদ্যোগে শুকনো খাবার দেয়া হলেও তা অপ্রতুল। তবে কাউকেই না খেয়ে থাকতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, নদী ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। খাদ্য সহায়তা দেয়া অব্যাহত থাকবে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাক উদ্দৌলা জানান, ভেন্ডবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে বাঁশের ও গাছের গুড়ির পাইলিং করে বালুর বস্তা ফেলে স্পারটি রক্ষায় চেষ্টা করা হচ্ছে। স্পারটিকে রক্ষা করতে না পারলে ডান তীরের বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। বিয়ষটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসিত করা হবে। পাশাপাশি বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশে পানি নেমে গেলে মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ