ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
ফুলবাড়ীয়া বিদ্যানন্দ স্কুল ভবন

খামছি দিলেই খসে পড়ছে কোটি টাকার ভবনের ঢালাই 

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১৯:৩২

দরপত্রের শিডিউল না মেনে যেনতেনভাবে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সেই ভবনের পিলারের কংক্রিটের ঢালাই হাতের খামছিতেই খসে পড়ছে। এহেন পরিস্থিতিতে ‘সাবধান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির নিকটে আসা নিষেধ’ লেখা একটি সাইনবোর্ড নির্মাণাধীন ভবনের পিলারে টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ভবন নির্মাণের প্রায় কোটি টাকা জলে গেল বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য ৯৯ লাখ টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। এরপর চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ২৭ জানুয়ারি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হৃদয় এন্টারপ্রাইজ। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র অনুযায়ী কাজ না করায় কাজ চলমান অবস্থাতেই ভবনের পিলারে আচড় অথবা খামছি দিলেই পিলারের কংক্রিটের ঢালাই খসে পড়ে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ নতুন ভবন নির্মাণে নিম্নমানের ইট, পাথর বালু, সিমেন্ট দিয়ে কাজ করা ভবনটির অবস্থা খুবই নড়বড়ে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ভবনটি। তাই দ্রুত ভবনটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

ও সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রণব সরকার এবং উপ সহকারী শাহরিয়ার কাজটি দেখবাল করত। পিলার ঢাইয়ের সময় নামমাত্র সিমেন্ট ব্যবহার করায় স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে পড়ে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার প্রণব

সরকার প্রায় ৩০ ব্যাগ সিমেন্ট রিজেক্ট করে। কিন্তু শেষের দিকে ওই ৩০ ব্যাগ সিমেন্ট পুনরায় ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করে।

এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের দপ্তরি আ. জলিল মিয়া একটি কংক্রিটের পিলারে হাত দিয়ে খুচা দিতেই জুর জুরি ভাঙ্গতে শুরু খসে পড়তে শুরু করে ঢালাই। তারপর শিক্ষকদের বিষয়টি অবগত করেন। সে সময়েই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ভবন নির্মাণে ভয়াবহ অনিয়মের বিষয়টি অবগত করেন।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউএনওকে জানানো হলে পরিদর্শন শেষে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় কাজ বন্ধ করে দেন ইউএনও। এরপর এলজিইডির ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভবনটি পরিদর্শন করেছে।

এদিকে ভবন নির্মাণের ফলে গত ৭ মাস ধরে অস্থায়ী ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ একটি টিনের ছাপড়া ঘরে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বলেন, ভবনটি এতোই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যে ভবনটি পাশ দিয়ে কেউ হেটে যেতেও ভয় পান। তাই এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণাধীন ভবনটি ভেঙে পূননির্মাণের দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় কালাদহ ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি অত্যান্ত ন্যাক্কার জনক। ছাত্র-ছাত্রীদের এখন একটাই ভয় কাজ করছে যেকোন সময় ভবনটি ভেঙে যেতে পারে। আমি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুল করিম বলেন, ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। ঢাকা থেকেও একটি প্রকৌশলী টিম সরেজমিনে তদন্ত করবেন। এরপর যে প্রতিবেদন দিবেন সেই অনুযায়ী ভবনটির কাজ সম্পন্ন করা হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ