বিলুপ্তপ্রায় কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের যশোরে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের ৩ বছরের নিবিড় গবেষণায় এই সাফল্য ধরা দিয়েছে। ফলে বিলুপ্ত প্রায় কাকিলার প্রাচুর্য ফিরবে গ্রাম-বাংলায়। শুধু তাই নয়, কৃত্রিম প্রজননের কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের এই মাছটি চাষ করা যাবে বদ্ধ পুকুরেও।
যশোরের হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খানের ভাষ্য, এক সময় প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে কাকিলা মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্টসহ বিভিন্ন কারণে কাকিলা মাছ এখন দেখা যায় না বললেই চলে।
এদিকে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) যশোর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে কর্মরত বিজ্ঞানীরা মাছটির কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন করেছেন। কাকিলার প্রজনন উদ্ভাবনে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, মাছটির প্রজননের জন্য পিজি (পিটুইটারি গ্লান্ড) হরমোন ব্যবহার করা হয়। গত ১৮ আগস্ট পুকুর থেকে মাছ ধরে ৪ জোড়া বাবা-মা মাছ নির্বাচন করে হ্যাচারির চৌবাচ্চায় রাখা হয়। সেখানে নির্দিষ্ট সময় ধরে ঝর্ণাধারায় রেখে সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরে মা-বাবা মাছকে একসাথে একটি চৌবাচ্চায় রেখে ঝর্ণাধারা দিয়ে সেখানে কচুরিপানা রাখা হয়। এর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর মা মাছ ডিম ছাড়ে। ডিমের ভেতরে বাচ্চার বিভিন্ন দশা ও উন্নয়ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ডিম ছাড়ার প্রায় ৯০ থেকে ১০০ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়।
গবেষক দলের সদস্য ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদী থেকে কাকিলা ব্রুড (মা-বাবা মাছ) মাছ সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে যশোরে আনা হয়। এরপর সেগুলো যশোরের স্বাদু পানি উপ-কেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হয়। আর সেগুলোকে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কার্প জাতীয় মাছের জীবিত পোনা ও নানা জলাশয় থেকে সংগৃহীত জীবিত ছোট মাছ খাওয়ানো হয়। এভাবে পুকুরের আবদ্ধ পরিবেশে কাকিলা ব্রুডগুলোকে অভ্যস্ত করা হয়। এর পরে চলতি বছরের মে মাস থেকে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্যে উপ-কেন্দ্রের হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মা-বাবা মাছকে বিভিন্ন ডোজের হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় বৈজ্ঞানিক সব প্রটোকল। এভাবে কয়েকবার বিভিন্ন ডোজের ট্রায়াল দেয়া হলেও মাছের প্রজনন সফলতা আসেনি। কিন্তু অবশেষে ২৫ আগস্ট প্রজননকৃত মাছের ডিম থেকে পোনা বের হয়। ফলে কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা আসে।গবেষক দলের প্রধান ও বিএফআরআই যশোর স্বাদু পানির উপ-কেন্দ্র প্রধান ড. রবিউল আউয়াল হোসেন জানান, কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন বাংলাদেশ এই প্রথম। বিশ্বের কোথাও এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ