ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। ঈদের পরদিন থেকে বেশ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তবে তাদের অধিকাংশই কক্সবাজার ও জেলার আশপাশ এলাকার লোকজন।
হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে গত দুইদিনে অন্তত অর্ধ লাখের বেশি পর্যটক সমাগম হলেও স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা বেশি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বৃষ্টি আর ঈদের কম ছুটি।
শনিবার বিকেলে সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী (সায়মন) পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকের চেয়ে স্থানীয়দের ভিড় বেশি।
সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা জুনাইদ হোসেন বলেন, কোরবানি শেষ করে মন সতেজ করতে চলে এলাম সমুদ্র দেখতে। বাড়ির একেবারে কাছে সমুদ্রসৈকত হওয়া সত্বেও কোনোদিন শখের বসে এখানে আসা হয় না। আর ছুটির দিন, তাছাড়া ঈদ। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে বালুচরে চলে এসেছি।
ঢাকার মিরপুর থেকে ভ্রমণে আসা রুহী চৌধুরী বলেন, আমাদের বিয়ে হলো বেশি দিন হয়নি। অফিস থেকে ছুটি পাওয়া মাত্রই সময় নষ্ট না করে কক্সবাজার দেখতে এসেছি। আগামীকাল আমরা ইনানি ও হিমছড়ি সমুদ্র সৈকত এলাকায় ঘুরে দেখব। এখানে আনন্দ ও উল্লাসে কাটছে আমাদের সময়।
সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার মিরপুর থেকে আগত আমিনুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ঈদে অফিস থেকে যে কদিন ছুটি পেলাম, তা কাটাতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে এলাম। দুয়েকদিন থাকবো, ঘুরবো তারপর চলে যাবো। পরিবারের সবার সঙ্গে সৈকতে বেড়াতে পেরে ভালো লাগছে।
ঢাকা থেকে আসা সরওয়ার হোসেন বলেন, মনে করেছিলাম পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার সৈকত। কিন্তু এসে দেখি তেমন বেশি নেই। তবে পর্যটক কম বলে সৈকতে চলাফেরা করতে সুবিধা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ইনানী হিমছড়িসহ বিভিন্ন পর্যটনস্পট ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকরা। তবে সৈকতের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
কক্সবাজার সৈকতে দায়িত্বরত বিচকর্মীদের দলনেতা মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ঈদুল আজহার দিনে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থী ভিড়ের সম্ভাবনা মাথায় রেখে বিচকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালের দিকে লাবণী, সুগন্ধ ও কলাতলী পয়েন্টে অর্ধলাখের মতো দর্শনার্থী সৈকতে নামে; যাদের ৮০ শতাংশ স্থানীয় দর্শনার্থী। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পর্যটক দেখা গেছে।
লাবণী পয়েন্ট ছাতা মার্কেটের চটপতি দোকানদার মুজিবুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহার দিন থেকে যেমনটি আশা করেছি তা মোটেও হয়নি। শুক্রবার দুপুর থেকে দোকান খুলে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত মাত্র কয়েকজন ক্রেতা এসেছে।
একই কথা জানিয়েছেন সৈকতের ভ্রাম্যমাণ ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবদু শুক্কুরও। তিনি বলেন, যে কিছু লোক দেখা গেছে তারা স্থানীয় হওয়ায় বেচাবিক্রি হয়নি। তবে শনিবার থেকে বেশ কিছু পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, সাধারণত কোরবানির সময় ঈদুল ফিতরের মতো পর্যটক সমাগম হয় না। কারণ খুব বেশি ছুটি পাওয়া যায় না। এবার ঈদুল আজহায় সরকারি ছুটি ছিল পাঁচদিন। সেজন্যে আমাদের টার্গেটও সীমিত পর্যায়ে থাকে।
কিন্তু এর মধ্যেও যে ব্যবসা হয় তা আশানুরূপ থাকে। ঈদের প্রথমদিন কোরবানি নিয়ে মানুষ ব্যস্ত আছেন। শুক্রবার থেকে কিছুটা জমে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ইতিমধ্যে অধিকাংশ হোটেলে ৩০-৪০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, আজ শনিবার থেকে বুকিং দেওয়া আরও ১৫ হাজারের মতো পর্যটক কক্সবাজারে আসবে। পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ঈদে কক্সবাজার ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এজন্য কয়েক স্তরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকত, মার্কেট, হোটেল-মোটেল জোন, পর্যটন স্পটগুলোয় যাতে পর্যটকরা নিরাপদ ও আনন্দের সাথে কাটাতে পারে তার জন্য কাজ করছে আমাদের টিম।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ