ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুলনায় ভাতার লাখ লাখ টাকা তুলে নিচ্ছে অসাধু চক্র

প্রকাশনার সময়: ৩১ আগস্ট ২০২১, ১৯:১০

খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা বাজারের বিধবা নারী কৃষ্ণা রায়। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র প্রতিবন্ধী শিশু ছেলেকে নিয়ে পড়েন চরম আর্থিক সংকটে। বিভিন্ন জনের সহায়তায় ফুটপাথে ভাজা-পোড়া বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন তিনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সদয় হয়ে তাকে করে দিয়েছেন একটি বিধবা ভাতার কার্ড। কিন্তু মোবাইল ব্যাংক নগদ একাউন্ট তার নাম্বারে আসা ভাতার প্রথম কিস্তির ৩ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে অসাধু চক্র।

চালনা সবুজপল্লী এলাকার বৃদ্ধ আফতাব খান। তার নিজ নামের ০১৯৮৮৭০২২১৫ নাম্বারে নগদ একাউন্ট জমা হওয়া বয়স্ক ভাতার ৩ হাজার টাকা গত ২৩ জুন রাত সাড়ে ১০ টায় নগদের ০১৯০৬৪৯৩৪৪০ এজেন্ট নাম্বার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। টাকা উত্তোলনের পর থেকে ওই নাম্বারটি বন্ধ আছে। নিরুপায় হয়ে তিনি বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৯ জুলাই দাকোপ থানায় ৬৭৫ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন।

দাকোপ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় ছেলের স্কুলের উপবৃত্তির ২ হাজার ৮০০ টাকা নগদ একাউন্ট থেকে অনুরূপভাবে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে দাকোপ থানায় জিডি করেছেন। পার চালনা গ্রামের বিধবা আমেনা বেগম। তার নগদ একাউন্ট জমা হওয়া ভাতার সাড়ে ৪ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে গত ১৯ আগস্ট দাকোপ থানায় ৭১৫ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এভাবে দাকোপের বিভিন্ন এলাকার মানুষের নগদ একাউন্ট থেকে বিভিন্ন ধরণের ভাতা ও উপবৃত্তির লাখ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গোপন ৫ ওয়ার্ডের নম্বর ব্যতীত কিভাবে অসাধু চক্র এভাবে গরীব অসহায় মানুষের ভাতা ও উপবৃত্তির টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে- এমন প্রশ্ন এখন সর্বত্র। এলাকাবাসীর মন্তব্য তাহলে সরকার প্রদত্ত ভাতার টাকা এমন অনিরাপদ নগদ একাউন্ট কেন দেওয়া হচ্ছে!

নগদের খুলনা বিভাগীয় ক্লাস্টার প্রধান সাইফুল আলম এ ধরণের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করছেন, তারা নিশ্চয় টাকা ফেরত পাবেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দাকোপে নগদের কোন প্রতিনিধি এ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা তো দুরে থাক, উল্টো ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা চাইতে গেলে তাদের প্রতিনিধি হীরক দুর্ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, ভাতা বা উপবৃত্তির টাকা একাউন্ট আসার পর ২/৩ দিন পর্যন্ত ওই চক্রটি অপেক্ষা করে। এ সময়ের মধ্যে সুবিধা ভোগী একাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট না করলে এরপর ঘটছে এমন ঘটনা। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে কখন টাকা ঢুকছে সেই তথ্য ওই চক্রটি পাচ্ছে কিভাবে? তবে কি এর সাথে নগদ একাউন্ট এবং ভাতা প্রদানকারীরা জড়িত- এমন কথা আলোচিত হচ্ছে।

বর্তমান সরকার গরীব অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনতে সকল ধরনের ভাতা ও উপবৃত্তি প্রদান করে আসছেন। কিন্তু নগদের অনিরাপদ সেবার কারণে গরীব অসহায়দের সেই টাকা চলে যাচ্ছে অসাধু চক্রের পকেটে। ভুক্তভোগীরা যে কোন মূল্যে ওই চক্রকে আইনের আওতায় আনার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাতার টাকা ফেরত পেতে সরকার এবং প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ