ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাবে উৎসাহ হারাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের পান চাষীরা

প্রকাশনার সময়: ৩০ আগস্ট ২০২১, ১৭:২৫

পান আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত শব্দ। বিয়ে বাড়ী থেকে শুরু নানা অনুষ্ঠানে পানের চাহিদা রয়েছে। দাদা-দাদী/নানা-নানীদের অনেকেরই অভ্যাস থাকে এ পান পাতা খাওয়ার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পান সুপারির কদর সেই আধিকাল থেকে। তাই বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষও করা হয়।

পান একটি নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচাপণ্য। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি পানের আবাদ হয়। পান মুখরোচক খাবার হিসেবে এর কদর অনেকটাই।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুর, রামেরগাও, চাম্পাতলা, চন্দনতলা, ধলাগাও, বজ্রযোগীনি, রামপাল ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার স্বল্প পরিসরে পান আবাদ করা হয়। এসব এলাকায় মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী হওয়ায় শত বছর আগেও ব্যাপক হারে পান চাষ হত।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি দপ্তর সুত্রে জানা যায়, ৪৫/৪৮ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে।

উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ও প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পান চাষিরা। ফলে হারিয়ে যেতে পারে মুন্সীগঞ্জের এই ঐতিহ্য। তথ্য সূত্রে জানা যায়, এখানকার উৎপাদিত পান জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে বাজার এবং পানের বরজ থেকে সপ্তাহে দুইদিন পান সংগ্রহ করে থাকে।

পান চাষী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ২০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। গতবছর লোকসান হয়েছে। এবারও একই অবস্থা, দাম খুবই কম, তবে উৎপাদন বাড়ানো, রোগব্যাধি নির্মুল, সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারনা না থাকায় নতুন করে কেউ পান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ এবং দাম কম হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পান চাষ থেকে। ফলে অনেকটাই কমে যাচ্ছে পানের আবাদ।

রতনপুর চাম্পাতলা এলাকার পানচাষি মোঃ নুর হোসেন বলেন, ৮০ শতাংশ জমিতে পানের আবাদ করেছি। পারিবারিক ভাবে বহু বছর ধরেই পান চাষ করি। সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে পান। বর্তমানে পানের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার চাষ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। বাপ দাদারা চাষ করে এসেছেন, এখন আমরা করছি। কমবেশি লোকসান হয়। তবুও চাষ করা ছাড়তে পারিনা। তাই আবাদ অনেটাই কমিয়ে দিয়েছি।

পান আবাদ ও বিক্রি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষকরা জানায়, বছরের আষাঢ় শ্রাবন মাসে পানের চাষ শুরু হয়। বিক্রির উপযোগী হতে ৪ মাস সময় নেয়। জাত অনুসারে বিক্রির উপযোগী হতে কিছু পান ৬/৭ মাস সময় লাগে।

বিভিন্ন জাতের মধ্যে গয়াসুর, চালতা গোটা, মাহাকাল ইত্যাদি জাত উল্লেখযোগ্য। তবে উৎপাদন হিসেবে পানের দাম অত্যন্ত কম। এক বিরা পানে আশি পিছ। যার বর্তমান বাজার মুল্য ৩০-৬০ টাকা আর শীত মৌসুমে ৫০-৮০ টাকা বিক্রি হয়। ব্যয় অনুয়ায়ী তেমন লাভ হয় না। পরিবারের বিকল্প উপার্জন না থাকায় চরম অর্থকষ্টে পান চাষিরা।

চাষিরা আরোও জানান, আগে এখানে শত শত বিঘা জমিতে পান আবাদ করা হত। এখন অনেকটাই কমে গেছে। সরকার থেকে আমাদের কোন সহযোগিতা করা হয় না। কোন প্রশিক্ষণ করানো হয় না। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেলে আবারো পান চাষে আগ্রহ ফিরবে অনেকের। এমনটাই দাবি স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহলের।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবা নাসরীন বলেন, ৪৫/৪৮ হেক্টর জমিতে পান আবাদ হচ্ছে। পান চাষিদের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছি। তবে তারা যদি ট্রেনিং করার আগ্রহ প্রকাশ করে আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। মুন্সীগঞ্জে পানের আবাদ বৃদ্ধি প্রকল্প না থাকায় রাজস্ব খাত থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ট্রেনিং করার চেষ্টা করবো। পান চাষীরা কোন পরামর্শ চাইলে আমরা সহযোগীতা করবো।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ