কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি করে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করে আনার’ বক্তব্য দেওয়া উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) নির্বাচন কমিশনের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার সদরে শহরের আটটি ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাতে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব রহমানের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় যুবলীগ নেতা ইমরুল এমন মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পুরো জেলায় তোলপাড় শুরু হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে শহরের তারাবনিয়ারছড়ায় এক সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস।
এদিকে ২০১৯ সালের সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফল বাতিল এবং ওই নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি মোতাবেক ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে আটজনকে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান খান।
তারা হলেন- প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা, কায়সারুল হক জুয়েল ও ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
লিগ্যাল নোটিসে বলা হয়েছে, সদর উপজেলা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির বক্তব্যের মাধ্যমে ইমরুল কায়েস নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংগঠিত অনিয়ম, নির্বাচনী ফলাফল পরিবর্তন সম্পর্কে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বর্তমান বিতর্ক এবং নির্বাচনী অনিয়মের বিষয়ে এটি একটি তথ্যভিত্তিক স্বীকারোক্তি।
তিনি এ বক্তব্যের মাধ্যমে ওই নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি তুলে ধরেছেন এবং তার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট ওই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাই অনিয়ম ও ভোট ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যা নির্বাচনী বিধিমালার পরিষ্কার লঙ্ঘন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কায়সারুল হক জুয়েলকে বিজয়ী করার জন্য ইমরুল কায়েস নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন এবং তা গণমাধ্যমেও এসেছে। ওই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রসঙ্গত, কায়সারুল হক জুয়েল বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা একে এম মোজ্জাম্মেল হকের কনিষ্ঠ ছেলে। তার বড় ভাই সদস্য বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মাসেদুল হক রাশেদ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে কক্সবাজার পৌরসভায় মেয়র পদ নির্বাচন করছেন।
এদিকে যুবলীগ নেতা ইমরুলের এ বক্তব্যের ফলে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ কায়সারুল হক জুয়েল ২০১৯ সালে প্রথম ইভিএম পদ্ধতির ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ইমরুল কায়েস চৌধুরী কর্তৃক সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রক্রিয়া দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র জুনিয়র অসংখ্য নেতা কর্মীরাও।
উখিয়া উপজেলা যুবলীগ নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী ভোট ডাকাতি করে জয় নিশ্চিত করার বিষয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল ও পৌর মেয়র পদের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ ইমরুল কায়েসের বক্তব্যকে পাগলের প্রলাপ বলে দাবি করেছেন।
তবে, যুবলীগ নেতা ইমরুলের বক্তব্যের দায় নিবে না জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা সভাপতি এড. ফরিদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কারও উদ্ভট ও ব্যক্তিগত বক্তব্যের দায় আওয়ামী লীগ নিবে না। বর্তমান সরকারের আমলে সবসময় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছেন বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
ভোট ডাকাতির বিষয়ে যুবলীগ নেতার বক্তব্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস. এম. শাহাদাত হোসেন।
নয়াশতাব্দী/এমটি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ