ময়মনসিংহের তারাকান্দায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে মুহুর্মুহু ককটেল ও গুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়।
এ সময় দোকান ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটে। প্রায় ২ ঘণ্টা চলমান সহিংসতায় বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাত সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বৃহস্পতিবার (০১ জুন) রাত ৮টা নাগাদ তারাকান্দা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এদিকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় বন্ধ থাকবে নির্বাচনী প্রচারণাও।
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার (২ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত তারাকান্দা বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। একই সময়ে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করে তারাকান্দা দক্ষিণ বাজারস্থ এইচ.এ ডিজিটাল স্কুলের সামনে থেকে ঘুরে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এসে মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই মুহুর্মুহ ককটেল ও গুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। এ সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রায় ২ ঘণ্টা চলমান সহিংসতায় বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূরুজ্জামান সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। এতে আমার অন্তত ১৫ জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করে বলেন, ‘তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় আমার অন্তত ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
অন্যদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নূরুজ্জামানে সর্মথকরা। তখন সড়কের দুই পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে দশটায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাল থেকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
টানা ৫ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারাকান্দায় টানা ৫ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় বন্ধ থাকবে নির্বাচনী প্রচারণা।
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শুক্রবার (২ জুন) সকাল ৬টা থেকে ১৪৪ ধারা কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রম বলবৎ থাকবে ৫ জুন সকাল ৬ টা পর্যন্ত। এই সময়ে সকল প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন তারাকান্দা বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। তবে এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। আর কোন পক্ষও এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি।’
ওসির বদলির দাবিতে দোকানপাট বন্ধের হুমকি : কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়েরের বদলির দাবি জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামান সরকার।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবারের মধ্যে ওসির বদলির আদেশ জারি করতে হবে, নাহলে তারাকান্দা বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকবে।’
নুরুজ্জামন সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি তারাকান্দা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। সম্প্রতি তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নুরুজ্জামানের দাবি, গতকালের হামলা ছিল পরিকল্পিত। গত বুধবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা নুরুজ্জামানের পেট্রল পাম্পে গিয়ে হত্যার হুমকি দেন। এরপর তিনি ওসিকে বিষয়টি জানিয়ে নিরাপত্তা দাবি করেন। বৃহস্পতিবার রাতে হামলার সময় নুরুজ্জামান সরকার নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে ছিলেন না। তবে খবর পেয়ে তারাকান্দা থানার ওসিকে ফোন করলে ওসি ফোন কেটে দেন।
নুরুজ্জামান বলেন, ‘থানা থেকে আমার নির্বাচনী কার্যালয় মাত্র ১০ থেকে ২০ হাত দূরত্বে। অথচ পুলিশ আসেনি। পরে ৯৯৯–এ ফোন করা হলে পুলিশ আসে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে তারাকান্দা থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ‘রাতে নুরুজ্জামান সরকার যখন ফোন করেছিলেন, তখন অন্য অনেকগুলো কল আসে। ওই সময় ব্যস্ত থাকায় তাঁর ফোন ধরা সম্ভব হয়নি।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক (বহিস্কৃত) নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মন্ডল।
নয়াশতাব্দী/এমটি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ