ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ৩ দিন পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে বহিষ্কার

প্রকাশনার সময়: ২০ মে ২০২৩, ১৭:২৮ | আপডেট: ২০ মে ২০২৩, ১৭:৩২

আহ্বায়কের অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, আর্থিক লেনদেন, স্বৈরাচারী মনোভাব, নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় এবং সমন্বয়হীনতাকে দায়ি করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সদস্য সচিব কায়সারুল হক জুয়েল।

পদত্যাগের জন্য তিনি কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দিনকে দায়ী করে তার ব্যাক্তিগত ফেইসবুকে গত মঙ্গলবার (১৬ মে) পদত্যাগ পত্র আপলোড দিয়ে লিখেন ‘আলহামদুলিল্লাহ পদত্যাগ করলাম।’

এদিকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ৩দিন পর বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রিয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নিদের্শনা এই বহিষ্কার আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, ‘আমি তিনদিন আগে স্বেচ্চায় পদত্যাগ করেছি। অথচ আজকে বহিষ্কার করেছে বলে একটা সংবাদ দেখি, যেটা হাস্যকর বটে! এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছু হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি এটা টাকার বিনিময়ে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে এমন একজন নন পলিটিক্যাল, ধান্দাবাজ, স্বৈরাচারী, পরনিন্দাকারী ও মানসিকতার আহ্বায়ক রহিম উদ্দিনের সাথে আমার পক্ষে সংগঠন পরিচালনা করা কিংবা জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে আমি কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।’

জুয়েল বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ছাড়াও তিনি কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এর আগে পদত্যাগপত্রে অভিযোগ তুলে তিনি লেখেন, ‘বিগত ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনে জনাব রহিম উদ্দিন সভাপতি ও আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সভাপতি রহিম উদ্দিন স্বৈরাচারী ও একনায়তান্ত্রিক আচরণ শুরু করে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও নন পলিটিক্যাল লোকদের কমিটিতে যুক্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যান। এক্ষেত্রে আমি দ্বিমত পোষণ করিলে তিনি দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা থেকে বিরত থাকেন। দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে ও উপস্থিতিতে বিগত ২০১৭ ইং সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এক্ষেত্রেও সভাপতি রহিম উদ্দিন প্রদত্ত লোকজন ব্যবসায়ী ও অরাজনৈতিক ব্যাক্তি হওয়ায় সংগঠন অকার্যকর হয়ে পড়ে।

পদত্যাগপত্রে জুয়েল লেখেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর সভাপতি রহিম উদ্দিনের একনায়কতান্ত্রিক, একরোখা ও স্বৈরাচারী মানসিকতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি একটি অভিষেক ও পরিচিতি সভা করা সম্ভব হয়নি। তিনি যে কোন সাংগঠনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সবসময় আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে জটিলতা সৃষ্টি করতেন। যে কোন উপজেলা সম্মেলনের বিষয়ে কথা বললে তিনি এই সংগঠনের জন্মদাতা উল্লেখ করে তার অনুগত সভাপতি/সম্পাদক লোক দিতে হবে বলে বাড়াবাড়ি করে গন্ডগোল করতেন। এভাবেই তিনি কৌশলে উপজেলা সম্মেলন করা থেকে বিরত থাকেন।

রহিম উদ্দিন কোনোভাবেই উপজেলা সম্মেলন করতে চাইতেন না, কারণ উপজেলা সম্মেলন করলেই জেলা সম্মেলন করতে হবে, তার পদ চলে যাবে। কেন্দ্রীয় কমিটি বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও তিনি উপজেলা সম্মেলন করতে রাজী না হওয়ায় আমার পক্ষেও উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আমি শুধুমাত্র এককভাবে জেলার সিনিয়র নেতাদের নিয়ে টেকনাফ উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন করি। ঐ সম্মেলনেও তিনি উপস্থিত হয়নি।

তিনি আরও লেখেন, রহিম উদ্দিন দীর্ঘ সময়ে উপজেলা পর্যায়ে কোন বর্ধিত সভা কিংবা সাধারণ সভা করতেও আগ্রহী ছিলেন না। এ কারণে উপজেলার সংগঠনগুলো এক প্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়ার তৎকালীন সভাপতি সম্পাদকসহ অন্যান্যরা আওয়ামী লীগে চলে যাওয়ায় সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন থেকে নিষ্ক্রিয় ছিল। মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়ায় সাংগঠনিক কোন কার্যক্রম না থাকায় আমি বার বার চেষ্টা করা স্বত্বেও তিনি ঐ উপজেলাগুলোর কমিটি দিতে রাজী হয়নি। ফলে দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও ঐ উপজেলাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম নিশানা বর্তমানে নেই।

জুয়েল লেখেন, কেন্দ্রিয় সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশে কক্সবাজার জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বার বার তাকে অনুরোধ করলেও তিনি সম্মেলন করতে বিভিন্ন অজুহাত দেখান এবং কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রকের সাথে তার উন্নত যোগাযোগ রয়েছে বলে দম্ভ প্রকাশ করেন। ফলে গত ২৮ জুন ২০২২ সালে কক্সবাজার জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে গত ০৬ মে ২০২৩ সালে পুনরায় রহিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও আমাকে সদস্য সচিব করে ৫৫ জন সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠন করার পর তিনি একটি পরিচিতি সভার আয়োজন করতে পারেনি এবং আমি অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকার কারণে মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদ মিনারে স্বেচ্চাসেবক লীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেননি।

তিনি আরও অভিযোগ করে লেখেন, আমার অজান্তে আহ্বায়ক রহিম উদ্দিন অধিকাংশ সদস্যদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মেইন্টেইন খরচ দাবি করে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা করে বিশাল অংকের চাঁদা উত্তোলন করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও কক্সবাজারের সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় নেতার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আমাকে খুব ব্যতীত করেছে। তারা বিনা কারণে আমার প্রতি বিরাগভাজন হয়ে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ করতে দেখা যায়। তারা বিভিন্ন সময় আমার সাথে বৈরী আচরণ করে এবং আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। তাহাদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে আমি সংগঠনের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ি ।

জুয়েলে দাবি, বিভিন্ন উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করে রহিম আবার সভাপতি হতে যাচ্ছেন; তাকে টাকা না দিলে উপজেলা কমিটি সমূহ ভেঙ্গে দেওয়ার ভয় দেখাতে শুরু করেন। এছাড়া ১৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় যাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পরবর্তীতে সভাপতি-সম্পাদক বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে ঢাকায় যান। ঢাকা থেকে আসার পর আবারও তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রিয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা কারও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদ। এই বিদ্রোহী প্রার্থী ছোট্ট ভাই কায়সারুল হক জুয়েল। দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে ভাইয়ের পক্ষে মাঠে রয়েছেন জুয়েল।

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ