ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মেঘনায় প্রকাশ্যে ধ্বংস করা হচ্ছে লাখ লাখ রেণু পোনা

প্রকাশনার সময়: ০৩ মে ২০২৩, ১৬:১৩

ভোলার তজুমদ্দিন মেঘনা নদীতে চলছে বাগদা-গলদা পোনা নিধনের মহোৎসব। উপজেলার অন্তত ১৮-২০ টি স্পট হতে প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা আহরণ ও পরিবহন করা হলেও প্রশাসন এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে চলছে বাগদা ও গলদা পোনা শিকার। অন্তত হাজারখানেক ভ্রাম্যমান জেলে রাতদিন মেঘনার বিভিন্ন স্থান থেকে গলদা-বাগদার রেণু পোনা ধরছে । এর সাথে যুক্ত আছে আড়তদার ও ঘের মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোক। গলদা চিংড়ির আড়তদাররা সাধারণ জেলেদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অল্প টাকায় রেণু পোনা শিকার করতে বাধ্য করছে। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্টরা পোনা শিকারের বিষয়টি বিনিময় সূত্রে দেখেও না দেখার ভান করছে।

মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার শশীগঞ্জ মৎস্য ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, কেয়ামুল্যা বটতলা, ধোপারনীর খাল, চৌমুহনী, মহেষখালী বাগানের খাল, চাচড়ার কাটাখালিসহ ১৮-২০ টি স্পটে প্রকাশ্যে গলদা চিংড়ির রেণু কেনা বেচা চলছে। ভারতের তৈরী বিশেষ এক প্রকার জাল ও ভাসা জাল দিয়ে চলছে পোনা শিকার।

মাছ ঘাটের এ বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে অধিকাংশই অভাবগ্রস্থ পরিবারের সদস্য। যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু কিশোর। মৌসুমে দু’পয়সা উপার্জনের জন্য মেঘনা তীরবর্তী চরাঞ্চলের অভাবী পরিবারের শিশু কিশোর লেখাপড়া বাদ দিয়ে সাময়িকভাবে নেমে পড়েছে পোনা শিকারে।

পোনা শিকার করতে গিয়ে প্রতিদিন অন্যান্য প্রজাতির অসংখ্য মাছের রেণু পোনা এবং মাছের জলজ খাদ্যকনা এভাবে বিনষ্ট করলে নদীতে এসব মাছ বিলুপ্ত ও খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

মৎস্য বিভাগের মতে, মাত্র একটি চিংড়ি পোনার জন্য ২ শতাধিক অন্যান্য জাতের মাছের রেণু পোনা মেরে ফেলছে পোনা শিকারীরা। ফলে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

নদী থেকে বেপরোয়া চিংড়ি পোনা নিধন বন্ধে ২০০১ সালে মৎস ও পশু সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হলেও তা কার্যকর করার বিষয়ে মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে কোন তৎপরতাই নেই।

তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে কোষ্টগার্ড কেয়ামুল্যা বটতলায় গলদা রেণুর আড়তে অভিযান চালালেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সংবাদ পাওয়া যায়নি। অভিযানের কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে আবার শুরু হয় পোনা শিকার ও বিপণন। এ নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

অভিযোগ রয়েছে, তজুমদ্দিন উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কতিপয় জনপ্রতিনিধি এই চিংড়ির রেণু নিধনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা পোনা সংগ্রহের জন্য মেঘনা তীরবর্তী চাচড়া, কেয়ামুল্যা, মহেশখালী, বাগানের খাল ও হাকিমুদ্দিনের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতিদিন তজুমদ্দিন ও হাকিমুদ্দিনের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার ব্রেল পোনা পাচার হয় । আড়তদাররা এ পোনা ট্রাকে করে খুলনা, মংলা, বাগেরহাট সহ দেশের বিভিন্নস্থানে পৌছে দিচ্ছে।’

তজুমদ্দিন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে জেলেদেরকে সচেতন করা কিংবা রেণু পোনা শিকার না করার জন্য জেলেদেরকে সর্তক করা যাচ্ছে না।’

দক্ষিন আইচা কোষ্ট গার্ডের পেটি অফিসার এস,এম রানা বলেন, ‘রেণু শিকার বন্ধ রাখতে প্রতিদিনই আমরা মেঘনা-তেতুলিয়ায় অভিযান চালাচ্ছি।’

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ