ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গাজীপুরে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই কাল

প্রকাশনার সময়: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:০৫

গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে রোববার। এ নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মেয়র পদে প্রার্থীতার জন্য ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আট ধরনের তথ্যসংবলিত হলফনামা জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। হলফনামায় ভুল ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।

মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. মো. আজমত উল্লা খান পেশায় আইনজীবী। তার বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা। এর মধ্যে তার আইনজীবী পেশা থেকে বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকা। এর বাইরে শেয়ার সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক সুদ থেকে বার্ষিক আয় ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকের তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক ২৪ লাখ ৩ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পান। এছাড়াও লেখক হিসেবে দুটি বই বিক্রি করে ১ লাখ টাকা আয় বার্ষিক দেখিয়েছেন হলফনামায়। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমত উল্লার হাতে নগদ রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬ টাকা। স্ত্রীর কাছে রয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা। তার নিজের কোনো গাড়ি না থাকলেও স্ত্রীর নামে একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে।

আজমত উল্লা খান স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে জানিয়েছেন, তার কৃষিজমি নেই। অকৃষি জমি নিজের রয়েছে ১৪০ দশমিক ৬৩৭৯ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তার ৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নিজের ২০ তোলা ও স্ত্রীর ৩০ তোলা সোনা রয়েছে। এছাড়াও আগে আজমত উল্লার নামে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা থাকলেও টঙ্গী থানার হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অপরদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হন। এর তিন বছর পর ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন তিনি। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরতে পারলেও তার মেয়র পদের বহিষ্কারাদেশ আর প্রত্যাহার হয়নি। মেয়র পদে তিনি তিন বছর দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলমের আয় ও সম্পদ দুটিই কমেছে।

জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামা থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এ বছরের নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৯ লাখ টাকা।

পাঁচ বছর আগে জাহাঙ্গীর আলমের কৃষি খাত থেকে আয় ছিল দেড় লাখ টাকা, এবার কৃষি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ আয় ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারও একই অংক দেখিয়েছেন। গতবার ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছিলেন ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, এবার সে আয় কমে ৩ লাখ টাকা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ছিল ১৪.১৫ একর, এবার তার কোনো কৃষি জমি নেই। আগে অকৃষি জমি ছিল ৩৩.৭১ শতাংশ, এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৫.২১ শতাংশ। আবাসিক সম্পদ ছিল ৭.৪৩ শতাংশ, এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১.১৫ শতাংশ।

জাহাঙ্গীর আলমের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার হাতে রয়েছে, নগদ ৪০ লাখ টাকা। অথচ পাঁচ বছর আগে ছিল ৭ কোটি ৪৮ হাজার ৯৬ হাজার টাকা। আগে ব্যাংকে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা, বর্তমানে তার জমা আছে ৫০ হাজার টাকা। এবার তিনি তালিকাভুক্ত ও নন তালিকাভুক্ত শেয়ারের মূল্য দেখিয়েছেন অনারেবল টেক্সটাইলে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেড আলম এপারেলসে ২০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। গত নির্বাচনে তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা। এছাড়াও জাহাঙ্গীরের দুটি গাড়ি, ৩৫ ভরি সোনা, একটি বন্দুক, একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং আসবাবপত্র আগের মতোই রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকলেও এবার তার বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে।

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন তার বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা দেখিয়েছেন হলফনামায়। নিজের বর্গা জমি ও ব্যক্তিগত পরামর্শক হিসেবে এ আয় দেখিয়েছেন তিনি। তার হাতে নগদ ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে ৭৫ লাখ টাকা রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে পোষ্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার রয়েছে ৩.৬৬ একর কৃষি জমি ও ৭ বিঘা অকৃষি জমি। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা, ব্যাংকে রয়েছে ২ লাখ টাকা এবং ৫০ ভরি সোনা। এছাড়াও তার স্ত্রীর রয়েছে ৯.৬ একর কৃষি জমি, একশ তোলা সোনা ও মটর গাড়ি। তবে তার ঋণ রয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলা স্বাক্ষীর জন্য ধার্য্য আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এই নির্বাচনে না থাকলেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ্নূর ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। তিনি তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘গৃহ সম্পত্তি ভাড়া’। বছরে তিনি আয় করেন ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ টাকা রয়েছে ২৫ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে রয়েছে ৬ লাখ টাকা। ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৮ টাকা। তার ৫৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এছাড়াও স্থাবর সম্পদের ঘরে তিনি কিছু উল্লেখ না করলেও ৬ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে পূবালী ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪২৮ টাকা। এমবিবিএস সনদধারী এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি ফৌজদারি মামলা বিচার পর্যায়ে রয়েছে।

জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান বলেন, ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল এবং প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮মে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ৯ মে। আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জন প্রার্থী, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৮২ জন তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।’

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ