৩০ এপ্রিল থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা যখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন প্রবেশপত্র না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কক্সকাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া আলিম মাদরাসার ৭১ শিক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরাও।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে মাদরাসা ভবনে ক্ষুব্দ ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার প্রবেশপত্র চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রছাত্রীরা জানান, রোববার ৩০ এপ্রিল তাদের দাখিল পরীক্ষা শুরু হবে। মাদরাসায় ৭১ জন পরীক্ষার্থী আছে। প্রতিবছর মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে মাদরাসার অফিস থেকে পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড গ্রহণ করতেন। কিন্তু গত ১৫ এপ্রিল তারা জানতে পারেন রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তাদের প্রবেশপত্র জনৈক আবদুল হামিদ নামক একজন ব্যক্তিকে দিয়েছেন। আবদুল হামিদ নামের ওই ব্যক্তিকে তারা কখনো মাদরাসায় দেখেননি। এমনকি এরপর থেকে কতিপয় ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলে।
বিষয়টি শিক্ষার্থীরা মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামকে অবহিত করেন এবং তিনি তাদের যথানিয়মে প্রবেশপত্র দেয়ার আশ্বাস দেন।পরে ২০ এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অনৈতিক ষড়যন্ত্র ও প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে তিনি প্রবেশপত্র উদ্ধার করতে পারেননি। বিষয়টি জানার পর পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত ভেবে অসুস্থ হয়ে পড়েন মাদরাসার দুইজন শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, ১০ বছর পড়ালেখা করার পর তারা দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এই পরীক্ষা উচ্চ শিক্ষার প্রথম ধাপ। এই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে না পারলে তাদের উচ্চ শিক্ষার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিগত ৫ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম এই মাদরাসাটি পরিচালনা করে আসছেন। তার তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা ৯ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন এবং ২০২৩ সনের দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানায়, এর আগে প্রবেশপত্র চেয়ে মাদরাসার শিক্ষক আলা উদ্দিন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে প্রবেশপত্র উদ্ধারের আবেদন জানান। কিন্তু এতে কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে যান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোজাম্মেল হক সরেজমিনে মাদরাসায় গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
জানা গেছে, প্রবেশপত্র না পেয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাছির উদ্দিনের কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদকে লিখিত নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবদুল হামিদ নিজেকে এ মাদরাসার অধ্যক্ষ দাবি করেন। তিনি জানান, গত ১৩ এপ্রিল তিনি পরীক্ষা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়েছেন। পরদিন থেকে এসব প্রবেশপত্র তিনি বিলি করে যাচ্ছেন বলেও জানান।মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম জানান, কেউ বৈধভাবে অধ্যক্ষ হয়ে থাকলে মাদরাসায় আসতে হবে। তা না করে প্রবেশপত্র আটকে রেখে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করাটা দুঃখজনক। এ নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ