পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মিরুখালীর সম্ভ্রান্ত রায় বাড়ির( কুলু বাড়ি) পুরোনো জমিদারি আমলের মূল স্থাপনাটি ধসে পড়েছে। কুলু জমিদারবাড়িটি প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো। প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করা প্রাসাদটি নান্দনিক নির্মাণশৈলী ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত। আকৃতিতেও বিশালাকৃতির।
তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোনো নজরদারি না থাকায় অযত্ন-অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে স্থাপনাটি। সম্প্রতি কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির পর ধসে পড়েছে প্রাসাদের সামনের দেয়াল।
জমিদার বংশের উত্তরসূরিদের অভিযোগ, বাড়িটি সংরক্ষণে বারবার আবেদন জানালেও এগিয়ে আসেনি প্রশাসন। তবে জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেনের দাবি, প্রাসাদের বাকি অংশটুকু সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মিরুখালীর কুলু জমিদারবাড়িটি বর্তমানে রায়বাড়ি নামে পরিচিত। জমিদার বৃন্দাবন চন্দ্র রায় জমিদারি পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ চুন ও সুরকি দিয়ে নান্দনিক নির্মাণশৈলী আর কারুকার্যখচিত দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করেন।
বৃন্দাবন চন্দ্র রায়ের তিন ছেলে গুরুচরণ রায়, মহেশ চন্দ্র রায় ও পূর্ণচন্দ্র রায়ের বংশধররা বর্তমানে এ বাড়িতে বসবাস করছেন। প্রাচীনকাল থেকেই এ বাড়ি ঘিরে মেলাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। পূর্ণচন্দ্র রায় জমিদার থাকা অবস্থায় প্রায় দেড় শ বছর আগে বাড়িটিতে একটি সর্বজনীন দুর্গামন্দির নির্মাণ করেন।
প্রতিবছর দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থী হিন্দুরা মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। এখনও প্রতিবছর এখানে দুর্গা উৎসব, কালীপূজা ও বার্ষিক কীর্তন হয়।
জমিদারবাড়ির বাসিন্দারা জানান, মূল ভবনটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত। এ বছরের বর্ষায় ভবনটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন আগে ধসে পড়েছে প্রাসাদের সামনের দেয়াল। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রসাদের বাকি অংশটুকু।
রায় জমিদার বংশের উত্তরসূরি পংকজ জানান, জমিদারি আমলের স্থাপনাগুলো অবহেলা ও অযত্নে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থেকে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোনো নজরদারি না থাকায় অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রাসাদটি।
মিরুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ খান বলেন, ‘মিরুখালীর কুলুবাড়ির প্রাচীন স্থাপনাগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’
ধ্বংসাবশেষ জমিদারবাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জমিদারবাড়ির বাকি অংশটুকু সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মোগল শাসনের সময় জমিদারি পরিচালনার জন্য পিরোজপুর জেলায় কুলুবাড়ির মতো বেশ কিছু প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন জমিদাররা। এসব প্রাসাদ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয়দের দাবি, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকা এসব ভবন দ্রুত সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তানাহলে ইতিহাসটুকুও অচিরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ