ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভ্যান চালিয়ে জিপিএ-৫ পেল গার্মেন্টসকর্মী রমজান

প্রকাশনার সময়: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২৯ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৮
ভ্যান চালিয়ে জিপিএ-৫ পেল গার্মেন্টস শ্রমিক রমজান

তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান রমজান। মায়ের কোলেপিঠে মানুষ সে। চার সন্তানের ভরণ-পোষণ জোগাতে ভীষণ খাটতে হতো মাকে। মায়ের কষ্ট লাঘবে একটু বড় হতেই কাজ শুরু হয় তার। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা আর তীব্র অভাবের ভিড়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

অন্যের বাড়িতে কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাতো রমজান। এসএসসির আগে টেনেটুনে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু এবার এসে আর পারল না। বাধ্য হয়ে ভ্যানের চাকায় প্যাডেল মারতে শুরু করল। সফলতার হাতছানি ছুঁয়েছে রমজানকে। এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের মীরডাঙ্গী গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে রমজান আলী। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সে। এইচএসসিতে রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। তার ফলাফলে খুশি পরিবার ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, তার জীবনটা একটা সংগ্রাম। অনেক কষ্ট করে সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, ভ্যান চালিয়ে ভালো ফলাফল করেছে। তার ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। আমরা তার পাশে ছিলাম। আগামীতেও তার পাশে দাঁড়াব। সেই সাথে সকলকে তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।

রমজান আলী বলেন, পরীক্ষা শেষ করার পর আমি ঢাকায় চলে আসি। এখানে এসে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করি। এখনো গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত আছি। ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর পাইনি। মা অনেক কষ্ট করে আমাকে লালন-পালন করেছেন। মায়ের সাথে কাজ করে নিজের খরচ ও পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। তবুও পিছপা হয়নি। স্বপ্ন ছিল একদিন ভালো ফলাফল করে একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। আজকে একটা মনের আশা পূরণ হল। পরীক্ষা দেওয়ার সময় যে দিনগুলোতে ফাঁকা ছিল ভ্যান চালিয়ে আয় করেছি। আমার মা বলতো আমি ভালো ফলাফল করব। আজকে সে আশা পূরণ হয়েছে। গতকালকে গার্মেন্টসে বলেছি আজকে আমার ছুটি লাগবে। ছুটি নিয়ে আজকে বাসায় ছিলাম। জিপিএ -৫ পেয়ে আমি আজ অনেক খুশি। রেজাল্ট শোনে সব কষ্ট ভুলে গেছি। আমার মা অনেক খুশি হয়েছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি ও পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাইলে রমজান বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে কোচিং করতে পারিনি। সে কারনে ভাবছি এক বছর পর ভর্তি হব। তারপরেও চেষ্টা করব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। ভবিষ্যতে ভালো একটি চাকরি করে পরিবারের কষ্ট লাঘব ও দেশ সেবা করব।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকারনাইন বলেন, বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের তেমনি অনুপ্রেরণার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ