ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাটোরে শীতার্ত মানুষের পাশে ‘শীতের হাসি’

প্রকাশনার সময়: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:২৫

নাটোরে অসহায় শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতা পরশ বিলাচ্ছেন ‘শীতের হাসি’। শীত এলেই ছিন্নমূল অসহায়-গরিব মানুষের কষ্ট বেড়ে যায় বহুগুণ। শীত থেকে বাঁচতে বিত্তবানরা নানা উপায়ে শীত নিবারণ করেন। কিন্তু ছিন্নমূল অসহায় শীতার্ত মানুষ পড়েন চরম বিপদে। শীত যেন গরিবের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়। তাই ছিন্নমূল, অসহায়-গরীব শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন ‘শীতের হাসি’।

নাটোরের সদর উপজেলা, নলডাঙ্গা, সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছিন্নমূল, অসহায়-গরীব শীতার্ত মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে লেপ। প্রচণ্ড শীতে শীতার্ত মানুষগুলো লেপ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ও পাচ্ছেন উষ্ণতার পরশ।

অসহায়-গরীব ও ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের কথা ভেবে স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. মামুনুর রশীদ ২০১৯ সালে ‘শীতের হাসি’ নামে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম নিজের উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাশ্রমে শীতার্ত মানুষের মাঝে লেপ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে সমাজের বিত্তবান, ধনী ও জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সহায়তায় বড় পরিসরে লেপ বিতরণ শুরু হয়। নাটোরের শীতার্ত মানুষের কাছে ‘শীতের হাসি’ এক ভালোবাসার নাম।

‘শীতের হাসি’ সংগঠনের সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ২০১৯ সালে নিজ উদ্যোগে অসহায় শীতার্ত মানুষের কথা ভেবে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এটি একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গত ৪ বছর থেকে নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অসহায়-গরীব শীতার্ত পরিবারকে একটি করে লেপ ও লেপের কাভার দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর ১০০ এর অধিক শীতার্ত পরিবারে লেপ দিয়েছি। তিন বছরে মোট ৩২৬ জন অসহায় শীতার্ত পরিবারকে লেপ দেওয়া হয়েছে। এ বছর আরও ১০০ জন শীতার্ত পরিবারকে লেপ দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ৮৬ জন পরিবারকে এ লেপ দিয়েছি। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, সংগঠনের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা এবং দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ডোনারদের আর্থিক সহযোগিতায় এসব লেপ প্রস্তুত করে ছিন্নমূল অসহায় শীতার্ত পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিশেষ করে যাদের ঘরে শীত নিবারণের লেপ নেই, তাদের খুঁজে বের করে রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব লেপ বিতরণ করা হয়। শীতার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আমাদের এই সংগঠনের কাজ। আমাদের এ কাজে সমাজের বিত্তবানরাও যদি এগিয়ে আসলে শীতার্ত মানুষগুলো শীত থেকে রক্ষা পাবে।

উপজেলার পশ্চিম মাধনগর গ্রামের শতবর্ষজীবী রাহেলা বেওয়া বলেন, শীত আসলে লেপ না থাকায় অনেক কষ্ট করতে হয়। একটা চিকন কম্বল ও কাঁথা দিয়ে কোনোরকম শীতের রাত পার করতাম। লেপ না থাকায় বছরের পর বছর শীতে অনেক কষ্ট করেছি। এ বছর শীতের হাসি থেকে একটা বড় লেপ পেয়েছি। এখন আর ঠান্ডা লাগে না। লেপ গায়ে দিয়েই রাতে ঘুমাই।

বাসুদেবপুর সাঝিপাড়া গ্রামের আহমদ আলী বলেন, টাকার অভাবে লেপ বানাতে পারি না। তাই শীতে ঠান্ডায় কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেক বছর আগে পুরাতন একটা লেপ ছিল তাও ছিড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে রাতে বাতাসে ডুকে ঠান্ডা বেশি লাগে। এ বছর একটা লেপ পাইছি, অনেক মোটা আর খুব গরম। এখন আর ঠান্ডা লাগে না। রাতে আরামে ঘুমাতে পারি।

রেলস্টেশনে থাকা ৮০ বছরের বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী বলেন, বাড়িঘর নেই। স্টেশনেই থাকি। সারাদিন স্টেশনে কাগজের ফুল বিক্রি শেষে স্টেশনের এক কোণায় সুয়ে পড়ি। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাসে শরীর বরফ হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে শীতের রাত পার করি। কিছুদিন আগে শীতের হাসি নামে একটি সংগঠন থেকে মোটা বড় একটি লেপ দিয়েছেন। এখন সেই লেপ বিছিয়ে স্টেশনে ঘুমাই। সারা দিন কাজ করে অন্তত রাতে আরামে ঘুমাতে পারি। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোয়ার হোসেন বলেন,শীতের হাসি সংগঠনের কার্যক্রম টা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে অসহয় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সমাজের বিত্তবান এবং বিভিন্ন সংগঠনের শীতের মধ্যে অসহায় মানুষের পাশে থাকা উচিত।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার বলেন, অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছে ‘শীতের হাসি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের মতো এমন মহৎ কাজে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেই সাথে অসহায় শীতার্ত মানুষ শীত থেকে রক্ষা পাবে।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ