বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার হাসান আজিজুল হক এক মাস ধরে অসুস্থ জীবন-যাপন করছেন। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ‘বিহাসে’ তাঁর বাসা থেকেই চিকিৎসা চলছে। করোনার কারণে বাসায় লোক সমাগম কম হওয়ায় পরিবারের তত্বাবধানে চলছে চিকিৎসা ও পরিচর্যা।
তবে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর পুত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে অসুস্থতার কথা জানান। এরপরই গণমাধ্যমে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের অসুস্থতার তথ্য প্রকাশ পায়। ছাত্র-শিক্ষক, শুভাকাঙ্খীদের নজরে আসে অসুস্থতার খরব।
বাবা হাসান আজিজুল হককে নিয়ে দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাস শিক্ষক ইমতিয়াজ হাসান লিখেছেন, ‘আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা, তাঁকে আরও একা করে দিয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারি। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি, বাঁচার জন্য আব্বার ভাত-তরকারির সাথে সাথে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সংগত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না। কোভিডের মরণ কামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন। আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু, আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে?’
ইমতিয়াজ হাসান আরও লিখেন, ‘গত এক মাস যাবত তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওঁর পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটি কয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তাঁর খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাঁকে রাখবেন।’
তবে মঙ্গলবার রাতে হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, তাঁর বাবা সবসময় মানুষের সান্নিধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়াও হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস রয়েছে। বর্তমানে তিনি হাইপোন্যাট্রিমিয়ায় বেশি সমস্যায় রয়েছেন। এতে শরীরে লবণের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তিনি দুর্বলতা অনুভব করছেন। চিন্তাশক্তিও কমে যাচ্ছে। খুব বেশি কথা বলতে পারছেন না। করোনার কারণে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো তাঁর বাবার চিকিৎসা বাড়িতেই চলছে বলে জানান পুত্র ইমতিয়াজ হাসান।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক । রাজশাহীতে কেটেছে জীবনের অধিকাংশ সময়। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিগণিত। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ় বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ