নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এবারও প্রস্তুত কক্সবাজার। করোনা মহামারির পর থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ বরণে এবার লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বেশির ভাগ হোটেল-মোটেলে ফাঁকা কক্ষ নেই।
তবে সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে কোনো ওপেন এয়ার কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক আয়োজন না থাকায় এবার তুলনামূলক পর্যটক সমাগম কম বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারির আগে প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন কম হলেও লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। কিন্তু এ বছর কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন না থাকায় বিশেষ করে সৈকতে উন্মুক্ত মঞ্চে কোনো আয়োজন না থাকায় এবার উপচেপড়া ভিড় নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরে বড় কোনো অনুষ্ঠান না থাকলেও বিভিন্নভাবে বড় পরিসরে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন হবে কক্সবাজারে। শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের ইনডোরে নতুন বছরকে বরণ করতে থাকছে নানা আয়োজন।
কক্সবাজারের কলাতলীর আলম গেস্ট হাউসের জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটিতে পর্যটক সমাগম বেশ ভালো ছিল। সে তুলনায় থার্টি ফাস্ট নাইটে কম। তবে সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই পর্যটক সমাগম যে কম। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে এসব পয়েন্টগুলো মুখর ছিল পর্যটকে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা নিজেদের মতো করে উপভোগ করছেন সৈকতের সৌন্দর্য। বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাপ, আনন্দ উল্লাসসহ নানাভাবে সৈকতে আনন্দে মেতেছে পর্যটকরা।
ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাভেদ চৌধুরী বলেন, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হোটেল শতভাগ অগ্রিম বুকিং রয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও নতুন বছর বরণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। দুইজন তারকা শিল্পী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন।
একইভাবে তারকামানের হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস, কক্স টুডে, সায়মন বিচ ও লং বিচেও নানা জমকালো আয়োজন থাকবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও কিছু বড় মানের হোটেলেও নানা অনুষ্ঠান থাকবে।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম আনু জানান, ইংরেজি বছরের শেষ দিন মানে থার্টি ফার্স্ট। দেশের সব পর্যটকদের দৃষ্টি থাকে কক্সবাজারে। কারণ সৈকতে ২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত উপভোগ এবং বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রোমাঞ্চকর অনুভূতি কক্সবাজার থেকে পাওয়া যায়। তাই ইতোমধ্যে কক্সবাজারে পর্যটকরা চলে এসেছে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজারও।
পাবনা থেকে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা অদিতি রায় বলেন, সমুদ্রের প্রতি আমার টান দীর্ঘদিনের। তাই ছুটি পেলেই এখানে ছুটে আসি। এবারও বছরের শেষ দিনটি উদযাপনে এখানে ছুটে এসেছি।
গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক শহিদ মিয়া বলেন, সারা বছরই ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সুযোগ পেয়েই চলে আসলাম। ছেলে-মেয়েরা খুব আনন্দ করছে। এটাই ভালো লাগার বিষয়। আর সমুদ্র সৈকতের তুলনা তো আর কোনো কিছুর সঙ্গে হয় না। অসাধারণ একটি জায়গা।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বাস্তবতায় কক্সবাজারে কিন্তু পর্যটকদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। তবে বিনোদনের সুযোগ কম। আর বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে বিশেষ আয়োজন থাকলে পর্যটকরা উৎসাহিত হয়। এতে পর্যটক সমাগমও বাড়ে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এখানে নিরাপত্তাজনিত কোনো ঝুঁকি নেই। পর্যটকরা যেন নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে আমাদের অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে। কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে সহজে আমাদের অভিযোগ জানাতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈকতে দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ