ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রেলওয়ের ল্যাব আছে, নেই পরীক্ষা

প্রকাশনার সময়: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:১৩

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য সরবরাহকৃত যাবতীয় মালামালের গুনগত মান নিশ্চিতকল্পে ব্যবহারের পূর্বে ল্যাবে পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীনে পাহাড়তলীতে তাদের নিজস্ব পরীক্ষাগার থাকলেও তা যেন কাজীর গরুর মতো হিসেবে আছে গোয়ালে নেই অবস্থা।

২০১০ সালের পরে পণ্যের গুনগত মান পরীক্ষার কোন প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেনাকাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। নামসর্বস্ব কোম্পানীর পঁচা ও মানহীন পণ্য তথাকথিত কমিশন লেনদেনের মাধ্যমে কোন মতে রেলওয়ের দফতরে বুঝিয়ে দিয়ে ভালমানের পণ্যের টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত এই সংস্থাটিকে ঠকিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজসে অতিলোভী কিছু ঠিকাদার সিন্ডিকেট এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যাবতীয় কেনাকাটার বেশিরভাগ করে থাকেন প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও তার দফতর। কিছু ক্ষেত্রে সিএমই’র অধিনস্থ ডিজেল সপ, ওয়ার্কসপ, ডিএমই ও সিসিএম দফতরের ডিসিও। তবে বেশিরভাগ কেনাকাটার চুক্তিতে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) স্বাক্ষর করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করার পূর্বে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানোর বিষয়টি চুক্তিতে উল্লেখ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারদের সাথে কমিশনের অলিখিত চুক্তির ফলে কনজ্যুমার টেস্ট এর কথা বলা হয়ে থাকে। যার ফলে ঠিকাদাররা নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করার সুযোগ পেয়ে সহজেই রেলকে ঠকাতে পারে।

এসব অপকর্মের পেছনে রয়েছে কথিত রাজনৈতিক, স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার, রেলওয়েতে কর্মরত একাধিক অফিসারদের কথিত আত্মীয় স্বজনসহ মন্ত্রীর প্রভাবও খাটান অনেকে।

নিয়ম অনুযায়ী জরুরি দেখিয়ে ২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষমতা আছে সিএমই’র অধিন কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের। কিন্তু এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে অবৈধ সুবিধা ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য পাকাপোক্ত করতে এলটিএম এর মাধ্যমে নিম্নমানের খুচরা মালামাল কিনে থাকে। যেখান থেকে কমিশনের একটা অংশ বিভিন্ন চেয়ার ভেদে কমবেশি বাগ-বাটোয়ারা হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে পাহাড়তলী পরীক্ষাগারের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেলে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ ঠেকাতে ১৯৫৮ সালে নিজস্ব পরীক্ষাগার স্থাপন করার পর লুব অয়েল পরীক্ষা হলেও ১৯৬৬ সাল থেকে ক্লথ লেদার আর্টিফিসিয়াল, হোস পাইপ, রাবার আইটেম, এম এস শীট, এস এস শীট, এস এস রাউন্ড ও হেক্সাগোনাল, স্টীল স্প্রিং সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিং কম্পোজিশন, লুব অয়েল, রং ও বিভিন্ন ক্যামিকেলসহ সবধরণের মালামাল ব্যবহারের পূর্বে ল্যাবে পরীক্ষা করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে আর এর জন্য পরীক্ষাগারে বেতনভুক্ত কেমিস্টসহ ৮/১০ জনের একটি টিম কর্মরত আছে।

কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে কেনাকাটার দায়িত্বপ্রাপ্তরা কর্মকর্তারা মালামাল পরীক্ষার তেমন একটা প্রয়োজন অনুভব করছেন না। আগে যেখানে বছরে ১২ শ থেকে ১৩ শ সেম্পল পরীক্ষাগারে আসতো সেখানে বিদায়ী বছরে মাত্র ৫৬ টি সেম্পল এসেছে যার বেশিরভাগই আমদানির, ভাল ব্র্যান্ডের পণ্য এগুলো তেমন ভেজাল থাকেনা। যেগুলো নিম্নমানের পরীক্ষা করলে রিজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন পণ্য তারা এখন আর ল্যাবে পাঠাচ্ছেন না। তারা রেলকে ফাঁকি দিতে কনজ্যুমার টেস্ট করে থাকে প্রকৃতপক্ষে কনজ্যুমার কখনো পণ্যের গুনগত মান যাচাই করতে পারেনা তারা শুধুমাত্র সাইজ দেখে মেলাতে পারে।

এব্যাপারে সিসিএস দফতরের একজন ডিসিওএস নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা পরীক্ষার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা। যেহেতু সিসিএস চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন তাই পরীক্ষার ব্যাপারে চুক্তিপত্রে যেমন উল্লেখ থাকে আমরা তেমনটি করে থাকি।

তবে সম্প্রতি একটি আইটেম পরীক্ষা করা হয়েছে বললেও তাও পরীক্ষা হয়নি বলে জানিয়েছেন ল্যাব ইনচার্জ।

ল্যাবে পরীক্ষা তুলনামূলক কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/পরিদর্শন আরিফুজ্জামান সিকদার বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বেশিরভাগ পণ্য কনজ্যুমার টেস্টের কথা বলা থাকে তাই সেগুলো ব্যবহারকারীরাই পরীক্ষা করে নেয় আর যেগুলো সেন্সেটিভ আইটেম সেগুলো আমরা বুয়েটে পরীক্ষার জন্য পাঠাই।

নিজস্ব ল্যাব থাকতে বুয়েটে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে রেলের ক্ষতি করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০১০ এর পূর্বে আমি যখন ডিসিওএস/পরিদর্শক ছিলাম তখনো সবকিছু পরীক্ষা হতো।

এখন কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনতো হওয়ার কথা নয়। ল্যাব টেস্ট ছাড়া কোন কিছু ব্যবহার করারও কথা নয় তবুও যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

এব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কারখানার দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার দাসের সাথে কথা বলতে একাধিকবার ফোনে কল বার্তা ও হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে কথা বলতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইলে কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ