ঘুষের অভিযোগে বরখাস্ত হলেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ফতুল্লাহ’র নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মাহমুদুর রহমান সরদার (আইডি নম্বর:১১৪৮৪)। ডিপিডিসি’র ডিজিএম (এইচ.আর) সূর কামরুন নাহার স্বাক্ষরীত এক অফিস আদেশে এই বরখাস্ত করা হয়। যার স্মারক নম্বর : ৮৭.৪০৫.৪২০.০৫.২৯.০৪৮.২০২২.৬১, তারিখ-২৭/১২/২০২২ ইং।
অফিস আদেশে বলা হয়, জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলস লিমিটেড কর্তৃক ডিপিডিসিকে প্রদানকৃত স্থাবর সম্পত্তিতে নতুন নির্মিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র হতে স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য ডিপিডিসি’র সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার এনওসিএস ফতুল্লা ও নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) একেএম মাহমুদুর রহমান সরদার কর্তৃক চল্লিশ লাখ টাকা উৎকোচ দাবির বিষয়টি কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত। এরুপ দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ডিপিডিসির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হওয়ায় একেএম মাহমুদুর রহমান সরদারকে চাকরি বিধি ২০১৭ এর ৭.৬ মোতাবেক চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করত: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সিস্টেম কন্ট্রোল এন্ড স্ক্যাডা, ডিপিডিসি দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তিনি নিয়মিত দপ্তরে (সংযুক্ত দপ্তরে) উপস্থিত থাকবেন এবং দপ্তর প্রধানের অনুমতি ব্যাতিরিকে কোথাও যাবেন না বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ তাদের স্থাপনায় নতুন সংযোগ প্রদানের জন্য আবেদন করলে নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মাহমুদুর রহমান সরদার বিভিন্ন অজুহাতে কিছুদিন ঘুরিয়ে সংযোগ দিতে তাদের কাছে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিষয়টি জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলস লিমিটেডের সংশ্লিষ্টরা অডিও রেকর্ড করে ডিপিডিসি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পরিচালক অর্থ গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ফতুল্লাহর নির্বাহী প্রকৌশলী এনওসিএস একেএম মাহমুদুর রহমান সরদারকে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে মোহাম্মদ কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত অপর এক অফিস আদেশে ডিপিডিসি ফতুল্লাহ’র নির্বাহী প্রকৌশলী এনওসিএস একেএম মাহমুদুর রহমান সরদার বরখাস্তে তদস্থলে শীতলক্ষা নির্বাহী প্রকৌশলী এনওসিএস মো. গোলাম মোরশেদকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সদ্য বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী এনওসিএস একেএম মাহমুদুর রহমান সরদার বলেন, ‘সম্পূর্ণ ঘটনাটি আমাকে ফাঁসাতে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমাকে বিপদে ফেলতে একটি চক্র এমন ঘটনা সাজিয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের পিছনে ফতুল্লায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এমন একজন এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসি’র সূত্রে জানায়, ডিপিডিসির শ্যামপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন কলকাঠী নেড়েছেন। কারণ হিসেবে সূত্র জানায়, একেএম মাহমুদুর রহমান সরদার এর পূর্বে প্রকৌশলী মাঈনুদ্দিন ফতুল্লা ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর প্রকৌশলী মাঈনুদ্দিনের আমলে জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলস লিমিটেড সংযোগ নেয়ার তদবির চলমান থাকাকালে তাকে শ্যামপুর ডিভিশনে বদলী করা হয় বলে সূত্রের দাবি। তাছাড়া থাকতে পারে আরো নেপথ্য কাহিনী, এমনটাই দাবি সূত্রের।
ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে আমার কাছে একদমই কোনো ছাড় নেই। এ ব্যাপারে আমি জিরো টলারেন্স। ডিপিডিসিতে দুর্নীতিবাজ যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
ফতুল্লা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর বরখাস্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, অভিযোগের পরই আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেই। আর সেই কমিটির তদন্তের আলোকে ফতুল্লা ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে, এটাই ডিপিডিসি’র নিয়ম বলে জানান ডিপিডিসি এমডি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ