ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রতারণার দায়ে ডিএসসিসি কর্মচারী বরখাস্ত

প্রকাশনার সময়: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৪৪ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:০১

অবশেষে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত সেই শেখ কামাল হোসেনকে বরখাস্ত করা হলো। তিনি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং ভান্ডার রক্ষক (মুদ্রন ও মনোহরী) অতিরিক্ত দায়িত্বে কর্মরত। ডিএসসিসি’র সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে শেখ কামাল হোসেনকে এই বরখাস্ত করা হয়। যার স্মারক নম্বর : ৪৬.২০৭.০০৭.১১.০১.৫৭.২০১৮-১০৩৬, তাং ২৬/১২/২০২২ ইং।

ডিএসসিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শেখ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ‘ঢাকা পৌর কর্পোরেশন কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা, ১৯৮৯’ এর বিধি ৩৯ এর (ক),(ঘ) এবং (চ) অনুসারে যথাক্রমে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অদক্ষতা এবং প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ৫ মে তারিখের ৪৬.২০৭.০০৭.১৭.০১.৫৭.২০১৮-৩৮৩ সংখ্যক স্মারক মূলে বিভাগীয় মামলা নম্বর ২৩/২০১৯ (সং-২) রুজু করা হয়। উক্ত বিভাগীয় মামলায় আনীত অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ায় শেখ কামাল হোসেনকে একই চাকরি বিধিমালার বিধি ৫৫(১) মতে চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

প্রসঙ্গত: ডিএসসিসি’র কর্মচারী ভান্ডার রক্ষক শেখ কামাল হোসেনের ঔদ্ধত্ব, চাতুরতা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে সংস্থাটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তটস্থ বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই শেখ কামাল হোসেনের সাথে জনৈক ব্যক্তির কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপে তার এবং ডিএসসিসি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু রোমহর্ষক তথ্য প্রকাশ করেছেন কামাল। সম্প্রতি প্রকাশিত ঐ কথোপকথনের একটি অংশে শেখ কামাল হোসেন বলেন, “আল রাজি (কর কর্মকর্তা-আলীম আল রাজী) এবং শাহজাহানকে (উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা-শাহজাহান আলী) বাঁচাইছি আমি। গতকাল সন্ধ্যার সময় আমি আর সচিব স্যার বসা, আরো দুই জন কর্মকর্তা। শাহজাহানের আর আল রাজির প্রমোশনটা দেয়া যাবে না। কেন দেয়া যাবে না? আমি বলছি- স্যার এই এই ঘটনা। স্যার আমি হয়তো চাকরিটার জন্য আপনাকে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু এই দুইটার মতো মাদার.... হয় না, এমনই বলছি- মুখ খারাপ করে। কয় কথা ঠিক। কিন্তু শাহজাহান ফোন দিতে পারে না কিন্তু আল রাজি ফোন দেয়।’

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগের দুইজন কর্মকর্তাকে নিয়ে ভান্ডার বিভাগের কর্মচারী শেখ কামাল হোসেনের এমন কথোপকথনের ৫১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড দৈনিক নয়া শতাব্দীর হাতে পৌঁছেছে। এতে রয়েছে সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা সহ কতিপয়ের কৃতকর্ম নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা।

ডিএসসিসি’র সচিব আকরামুজ্জানের সাথে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর তাকে নাম, পরিচয় এবং বিষয় জানিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে পুনরায় ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কিংবা তিনি আর ফোনও করেননি।

জানা গেছে, ভান্ডার বিভাগের কর্মচারী শেখ কামাল হোসেন ডিএসসিসি’র সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও তৎকালীন সিআরও ইউসুফ আলী সরদারের (চাকরিচ্যুত) অন্যতম ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পাশাপাশি ছিলেন অনেক বিশ্বস্তও। তিনি তৎকালীন সময় ডিএসসিসি’র ঠিকাদার নিয়ন্ত্রণকারী জুটি খ্যাত সবুজ-বিপ্লবেরও খুব ঘনিষ্ট হিসেবে ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অফিস ষ্টেশনারী সরবরাহ করা ঠিকাদার সবুজের সাথে কামাল অলিখিত অংশীদার ছিলেন বলেও সূত্র জানায়। এক পর্যায় ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কামালের সাথে সবুজের মতবিরোধ দেখা দিলে ঠিকাদার সবুজ তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। অভিযোগে কামাল ডিএসসিসিতে সরবরাহ করা কাগজের দামের অনেক বেশি বিল করেছে মর্মে জানান তিনি। পরবর্তিতে ঘটনা তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে শেখ কামালকে অঞ্চল-৩ এ বদলী করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরেই আবার তিনি নগরভবনে ভান্ডার শাখায় ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পরই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা হয়। ডিএসসিসি’র মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার সাথে সাথেই কামাল আর সাঈদ খোকনের পক্ষে থাকলেন না বলে সূত্রের দাবি। মুহুর্তেই তাপসের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে জাহির করতে কামাল নেমে পড়েন ভোটের মাঠে। যা নিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক কথার পাশাপাশি রয়েছে নানা সমালোচনাও।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতোমধ্যেই শেখ কামাল হোসেনের বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঔদ্ধত্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ