চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা উপজেলাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র অনুরূপ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত এ সুড়ঙ্গ পথের ভৌতিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ শতাংশ। বাকি কাজ কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। আগামী জানুয়ারিতে প্রথমদিকে এর উদ্বোধন হবে। স্বপ্নের এই টানেল দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গত ২৬ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের একটি টিউবের উদ্বোধন করেন। এই টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চল দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পাঞ্চলে রূপ নেবে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের ৯৭ শতাংশ ভৌতিক কাজ শেষ হয়েছে। টানেলে যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক ও পুরকৌশল কাজ প্রায় শেষের পথে। চলছে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ। টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ প্রায় শেষের দিকে।
টানেলের সূচনা : ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানের জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরপরই শুরু হয়েছিল নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্য সমীক্ষাসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, বঙ্গবন্ধু টানেল হতে যাচ্ছে দেশে অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। এ টানেলের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। নতুন মাত্রা যোগ হবে পর্যটন শিল্পে। টানেলের অপরপ্রান্তে গড়ে উঠবে ভারী শিল্প এলাকা। ওই এলাকা অর্থনৈতিক হাব হিসেবে পরিণত হবে। চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা উপজেলাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল।
মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলে কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি বন্দরসহ দুই কূলের শিল্প কারখানা আর অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে। বাড়বে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, টানেল চট্টগ্রাম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতিতে দারুণ অবদান রাখবে। টানেলের অপর প্রান্তে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড, চীনা শিল্পাঞ্চল, মহেশখালীর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ চট্টগ্রামে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে বাড়বে জনসমাগম। সেইসঙ্গে বাড়বে যানবাহনের চাপ। এসব কারণে চট্টগ্রাম নগরীকে নতুনভাবে সাজানোর কাজ চলছে।’
প্রকল্পের পরিচালক হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। তবে টানেল কখন উদ্বোধন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ দিকে টানেলের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে টানেলের দুপ্রান্তের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন। নির্মাণাধীন প্রকল্পে স্ক্যানার স্থাপনের বিষয়টি না থাকলেও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিশ্বের প্রথম।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ