সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও জেঁকে বসেছে শীত। জনদুর্ভোগ বেড়েছে, বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালে শিশুসহ ২৬৮ রোগী ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় ভর্তি হয়েছে ৪০ শিশু। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশু রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসে তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, বুধবার সকাল ৯ টায় জেলায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তাপ ছিল না। তবে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ২৬৮ রোগী এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪০ শিশু ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বহির্বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিনই প্রায় ৪ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে শিশু ওয়ার্ডে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শিশুটি চুয়াডাঙ্গা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হানুরবাড়াদি গ্রামের আলমগীর-মিতা দম্পতির মেয়ে। গত ২৪ ডিসেম্বর শিশুটি ভুমিষ্টের পরই শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটির মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তীব্র শীতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের সব সময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সব সময় গরম খাবার খাওয়াতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্সরা।
ডায়রিয়া আক্রান্ত একাধিক শিশু রোগীর স্বজনরা জানান, হঠাৎ করেই শিশুদের ডায়রিয়া এবং বমি শুরু হচ্ছে। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা করেও কম না হলে হাসপাতালে নিয়েছি। প্রয়োজনীয় ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দেয়া হচ্ছে।
নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু সিফাত রহমানের মা বলেন, হঠাৎ করে ছেলের জ্বর, ঠান্ডা, কাশি শুরু হয়। চিকিৎসক শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে। ওয়ার্ডে কোন জায়গা নেই। এই শীতে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, শিশুদের রোটারিং টিকা ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘনঘন স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সেইসাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান মুন্সী বলেন, সদর হাসপাতালে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। বেশিরভাগই শিশু রোগী। বেড়েছে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও। এছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে ৩শ-৪শ শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ