সময়ের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মিডিয়ার জোয়ারে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী জারিগান প্রায় হারিয়েই গেছে। তবে স্থানবিশেষে এর জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি। শীতকালে একটা সময় শেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসত জারির আসর। তাতে ঐতিহাসিক ঘটনা, কল্পকাহিনি আবার কখনো সমাজে ঘটে যাওয়া নানা বিষয় অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো।
জানা যায়, শীতকালে এককালীন সময়ে শেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ প্রত্যান্ত অঞ্চলে বসতো জারি গানের আসর ও মেলা। জারি গানের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠতো ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী ও সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা। অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় জারি গানের আসরে। যা জনপ্রিয় ছিলো গ্রামীণ মানুষের কাছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনো কমেনি এর জনপ্রিয়তা। মাঝখানে দোহারি, বাদক দল, তারপর গোলাকার ফাকা জায়গায়। এর চারিপাশে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকে দর্শক। ফাকা জায়গায় গোঙ্গর পায়ে নেচে গেয়ে গান গায় বয়াতিরা। আর তার সামনে ছেলে থেকে মেয়ে সেজে নৃত্য দিয়ে বাড়তি আনন্দ জোগায় তারা। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে অভিনয়ও।
আধুনিক যুগের এমন নাচ গান শুনে ও দেখে অনেক আনন্দ ভোগ করে সাধারণ মানুষ। আমন ধান ঘরে তোলার পর একসময় শেরপুর জেলার পাড়া মহল্লায় প্রতিনিয়তই হতো খোলামঞ্চে নাটক, গান ও জারি গান। এসব গান-বাজনা শুনে আনন্দ ভোগ করতো গ্রাম বাংলার মানুষ।
শেরপুর পৌরশহরের মোবারকপুর মহল্লার নাইম ইসলাম বলেন, ‘আগে রাত জেগে গ্রামীণ জারিগান আমরা দেখতাম। এখন এগুলো সচরাচর দেখা যায় না। শীত এলে বিভিন্ন জায়গায় জারিগানের আসর হতো। এগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত জারিগানকে বাঁচিয়া রাখা। ইউটিউব ও ফেসবুকের কারণে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী জারিগান প্রায় হারিয়ে গেছে।’
কিন্তু শিল্পীদের অভিযোগ, আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ায় শীতের সময় আগের মতো হচ্ছে না জারির আসর। এতে গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার পথে। ৩০ বছর থেকে ভেলুয়ার কবির মিয়া জারিগান করেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় ৩০ বছরে অনেক জারি তুলেছি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে আসর কমে গেছে। জনপ্রিয়তা কমেনি। এখনকার ছেলেপেলেরা জারিগানের আসর সম্পর্কে জানেই না। মানুষ এখন ইউটিউবের ফলে এগুলোর আয়োজন কম করে। আর আমরা সরকারিভাবেও কোনো সহযোগিতা পাই না।’
সম্প্রতি জারিগান অনুষ্ঠিত হয় মোবারকপুর মহল্লায়। ওই জারিগানের আসরের আয়োজক বাবুল মিয়া নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই জারির আসর নতুন প্রজন্মের কাছে এখন দুর্লভ। আগে এলাকায় আয়োজন হতো বেশি বেশি, এখন কম হয়। এলাকার সচেতন যুবসমাজ ও স্থানীয়দের নিয়ে হারিয়ে যাওয়া জারিগানের আসর পুনরায় ফিরিয়ে আনতে প্রতিবছর আয়োজন করা হলে এর গতি ফিরতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ