অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইতোমধ্যেই পাঠানো হচ্ছে ইভিএম মেশিনসহ সরঞ্জামাদি। ভোট উৎসব আজ মঙ্গলবার। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ইভিএম ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ভোটারদের ইভিএম সম্পর্কে ধারনা প্রদানসহ ভোটদান প্রক্রিয়া তুলে ধরে দুদিনের মক ভোটিংও সম্পন্ন করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে পুলিশ লাইন্স স্কুল মাঠে ২শ ২৯ প্রিজাইডিং অফিসারকে এক হাজার ৩শ ৪৯টি কক্ষের ৪ হাজার ৪৭টি ইভিএম মেশিনসহ সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়। সরঞ্জামাদি বিতরণের উদ্বোধন করেন রংপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন। এছাড়াও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরেআলম মিনা, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩৩টি ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও মাঠে থাকবেন। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৩৩ জন এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ১৬ জন। নির্বাচনী অপরাধ রোধ, বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে দায়িত্বপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিমিত্তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন তারা। পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখবো আমরা। প্রতিটি কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করব। এর বাহিরে পুরো রসিক এলাকায় ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। দুটি কেন্দ্রের জন্য একটি করে র্যাবের টিম থাকবে। কেন্দ্রে পুলিশ অস্ত্রসহ এবং অস্ত্র ছাড়া থাকবে। বিজিবি ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। আর টহল টিমের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেনই।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাত ১২টায় নির্বাচনী আনুষ্ঠানিক সব প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রার্থীরা আর কোনো ধরনের প্রচারণা করতে পারবেন না। নির্বাচনে ১১ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি থাকছে র্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনাও দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে যে পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার হবে, তার দ্বিগুণ ইভিএম আমরা প্রস্তুত রেখেছি। কোনোখানে ইভিএমএ সমস্যা হলে, সেটি কেন্দ্রে থাকা টেকনিক্যাল লোকজন ঠিক করে দেবে। যদি তারা ব্যর্থ হয় তবে মোবাইলে থাকা টেকনিক্যাল টিম সেটি ঠিক করবে। যদি তারাও ঠিক করতে না পারেন, তাহলে ওই কেন্দ্রের ভোট যতটুকু ওই ইভিএমে নেওয়া হয়েছে, ততটুকু অক্ষুণ্ণ থাকবে। সবার উপস্থিতিতে সেটিও সংরক্ষণ করে রাখবে এবং নতুন আরেকটি ইভিএম ব্যবহার করবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। ওই কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এর জন্য সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটার ছাড়া অন্য কেউ ভোটকক্ষের গোপন বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রবেশ করলেই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়বে এবং তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় দফায় আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর মহানগরের ২২৯টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯টি কক্ষে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ২২৯ জন এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকবেন ১ হাজার ৩৪৯ জন। মোট পোলিং অফিসার থাকবেন ২ হাজার ৬৯৮ জন।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ