ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চসিকে স্বামী প্রকৌশলী, স্ত্রী ঠিকাদার 

প্রকাশনার সময়: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪৭ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০২

চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার ঈদগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন সেলিনা আকতার; আর স্বামী এনামুল হক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী। স্ত্রী সেলিনার নামে ‘গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রকৌশলী এনামুল হক চসিকের সাথে ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিষয়টি আড়াল করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া ট্রেড লাইসেন্সে সেলিনা কৌশলে স্বামী এনামুলের নাম না লিখে লিখেছেন বাবা-মার নাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর হোসেন নামের একজনকে ব্যবসায়ীক অংশীদার করে সংগ্রহ করেছেন চসিকের ঠিকাদারি লাইসেন্স। যদিও প্রকৌশলী এনামই সব কাজ দেখাশোনা করেন। তার কাজের অন্যতম পার্টনার আলমগীর নন্দনকাননের একটি বিদ্যুৎ সরঞ্জামের দোকানদার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের সঙ্গে এনামুলের গাঁটছড়া বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদারদের সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়।

তাদের অভিযোগ, সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হকের প্রতিষ্ঠানের কাজও সবচেয়ে নিম্নমানের। নিজে স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি ব্যবসা করার কারণে তিনি সাধারণ ঠিকাদারদের প্রতিপক্ষ করছেন। কোনো সময় যদি তিনি কাজ না পান, তখনই তার রোষানলে পড়েন কাজ পাওয়া ঠিকাদার।

চসিক সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সড়কবাতি পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পান ডিপ্লোমাধারী এনামুল হক। উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্বে পদোন্নতি পান ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে৷

অনুসন্ধানে জানা যায়, তার পদোন্নতি পত্রে কোন সুযোগ সুবিধার বিষয়ে লেখা না থাকলেও সব সুযোগ সুবিধাই নিয়েছেন গত বার বছর। চলতি বছরের ৭ ই এপ্রিল অতিরিক্ত দায়িত্বে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে এনামুল হক নতুন করে পদোন্নতি পান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ত্রী সেলিনা আকতার হালিশহরের ঈদগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১৬-১৭ সালে স্বামী এনামের কর্মস্থল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারির কাজ করেছেন। গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকানা লেখা আছে এম রহমান মার্কেট ৩৬/৪৬ নন্দনকানন। ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চসিক থেকে নেয়া ট্রেড লাইসেন্সে কৌশলে স্বামীর নামের বদলে লিখেছেন বাবা-মার নাম।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স শাখার বালাম বইতে গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের মালিক হিসেবে আলমগীর হোসেন ও সেলিমা আকতারের নাম উল্লেখ রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নথি অনুসারে, গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের নামে ২০১৬ সালের ২৯ শে নভেম্বর প্রকৌশল বিদ্যুৎ উপ বিভাগের জোন -৪ এর আওতাধীন কেন্দ্রীয় সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সোডিয়াম বাতির আনুষাঙ্গিক মালামাল সরবরাহ ( স্মারক-চসিক/ প্রবি/বিদ্যুৎ /তঃপঃ-১/১৬-১৫৩) করেছেন ২ লক্ষ ৩১ হাজার পাঁচশত ২৫ টাকার।

২০১৭ সালে ৫ ই জানুয়ারি ২৬ উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের গলাচিপা পাড়ার বি ব্লকে সাবেক ইদ্রিস কমিশনার বাড়ির পশ্চিম পাশের সড়ক আলোকায়নের কাজের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন সেলিমা আকতার। এক লক্ষ ষাট হাজার ২২৫ টাকার কাজটি করার সময় চসিকের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন এনামুল। এই প্রকল্পের নথি অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলনকারী সেলিনার স্বামী এনামুল হক। এনামই আবার স্ত্রীর কাজের বিল উপস্থাপনকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন।

একই বছরে দামপাড়া স্টোরের জন্য স্টিলের র‌্যাক ক্রয়ের জন্য ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার কার্যাদেশ ( স্মারক-চসিক/ প্রবি/বিদ্যুৎ /পিওএম /১৭/১০৬, ৩/০৪/২০১৭) দেয়া হয়েছে গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজকে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরের জুবলী রোড়ের শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের নামে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। ব্যাংকের নথি অনুযায়ী সেলিনা আকতার তার স্বামী হিসেবে প্রকৌশলী এনামুল হকের নাম লিখেছেন। এই যৌথ হিসাবেই চসিকের বিলের টাকা জমা দেয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, আমি ঠিকাদারি করি না। যার লাইসেন্স সেই কাজ করেন। স্ত্রীর নামে লাইসেন্স থাকার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

জানতে চাইলে এনামুল হকের স্ত্রী সেলিনা আকতার জানান, তার নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে,সেটি তিনি জানেন না। সিটি করপোরেশনের কাজ করেননি তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ বলেন, কেউ যদি অনৈতিক কাজ করেন, তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। করপোরেশনের চাকরি করে ব্যবসা করার সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন প্রকৌশলীদের ঠিকাদারি ব্যবসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠার পরও অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম। বরং নানা অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে পদোন্নতি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না হয়নি কখনো।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ