এবার বিজয় দিবসের ছুটি সপ্তাহিক বন্ধের দিন পড়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি হয়নি। এতে চরম হতাশায় সময় কেটেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু সেই হতাশায় আলো দেখাচ্ছে এবারের বড়দিনের ছুটি। এই ছুটির সাথে শুক্র-শনিবার যোগ হওয়ায় তিনদিনের ছুটির সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপ্রেমীরা কক্সবাজার আসছেন।
এ উপলক্ষ্য করে আগাম বুকিং নিয়েছেন হোটেল-মোটেল ও কটেজ কক্ষ।ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকিট কেটেছে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলা কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া জাহাজের টিকিট। সেন্টমার্টিনেও এবারে আগাম কিছু বুকিং পেয়েছে সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।
তিনদিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে সাগরের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় তিন লাখ পর্যটক। শহরের ৪ শতাধিকের বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো রুম খালি নেই বলে জানিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।
শনিবার সকালে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকা থেকে আগত দেড় শতাধিক পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও রুম পাননি তারা। এখন ভরসা শুধুই ফুটপাত। এরকম বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক সড়কের পাশে অবস্থান করছেন।
কুমিল্লা থেকে আসা সুমন হোসেন বলেন, আমরা প্রায় ৩৫ জনের একটি গ্রুপ বাসভাড়া নিয়ে কক্সবাজার আসি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়ে কয়েকঘণ্টা সৈকতের চেয়ার আর রাত ১২টার পরে আমাদের বাসে বসে রাত কাটিয়েছি।
খুলনা থেকে আগত পর্যটক সাদেকুল ইসলাম জিকু বলেন, সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর কলাতলী নামক একটি রেস্তোরাঁতে সকালের নাস্তা করতে যায়। গিয়ে দেখি সেখানে পা রাখার জায়গা নেই। পরে পাশে রাঁধুনী নামক একটি রেস্তোরাঁয় এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করে নাস্তা করি। সেই সকাল থেকে রুম খুঁজতেছি এখনো পাইনি। যে হোটেলেই যাই সবার একটি কথা, রুম খালি নেই।
কলাতলী এলাকার তারকা মানের হোটেল সী উত্তরার রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা হাসিবুল বলেন, আমাদের হোটেলে ৬২টি রুম আছে, কিন্তু একটিও খালি নেই। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত সব বুকিং আছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য এলেও তাদের রুম দিতে পারছি না। আবার অনেকে কল দিয়েও রুম চাচ্ছেন।
হোটেল দি প্রেসিডেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, আমার হোটেলে ৫০টি রুম আছে। সবগুলো এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য আসছেন। অনেককেই ফেরত দিতে হয়েছে। কিছু পর্যটক পূর্বের পরিচিত হওয়ায় হোটেলে রুম দিতে না পেরে হোটেলের পাশে থাকা একটি ঘরে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখনো বাসে করে পর্যটক আসতেছেন।
ঝাউবন রেস্তোরাঁর মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, সকাল থেকে পর্যটকের চাপ বেশি। খাবার দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার রেস্তোরাঁয় আগে কাজ করতো ২৫ জন। বৃহস্পতিবার থেকে ৫০ জনের ওপরে কাজ করছে। তারপরও সামাল দিতে পারছি না।
বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারের ৪৫০টি হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে রুম চাইলেও তাদের দিতে পারছি না। আশা করি এই তিনদিনে সাড়ে তিন লাখ পর্যটক সমাগম হবে।
পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত লাইফগার্ড কর্মী ইউছুফ বলেন, কাল থেকে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি। যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, কক্সবাজার জেলায় যত পর্যটক স্পট রয়েছে সেখানে তিনদিনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের যেন কোনো প্রকার হয়রানি না হয় সেজন্য হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।
কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ