মাঠের এক পাশে একতলা পাকা ভবন। তার পাশে ভাঙা টিনের একচালা ঘরের চারপাশের ভাঙা বেড়া। শুধু টিনের চালাটি কয়েকটি খুঁটির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিচে ২০-৩০টি বেঞ্চ পাতা রয়েছে। সেখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
এর উত্তর পাশে নতুন দুইতলা ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ওই ভাঙা চালার নিচে ক্লাস নিতে ও পরীক্ষা কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি । ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক,অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা নতুন ভবনে দ্রুত পাঠদানের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে , উপজেলার মরিচপুরান বাজারে ১৯৩৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব পাশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা পাকা ভবন রয়েছে। এক কক্ষে শিক্ষক ও অন্যকক্ষ শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জায়গা সংকুলন না হওয়ায় কয়েক শিফটে ক্লাস চলতো। এই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনের জন্য মাঠের উত্তর পাশে বিদ্যালয়টির চারতলা ফাউন্ডেশনসহ দুইতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০২০ সালে ৮৩ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৩ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজটি পায় মেসার্স প্রেমা এন্ড আল- আমিন (জেবি) নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরিচালনার জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশে ২৫ হাত লম্বা ও ১২ হাত প্রশস্ত একটি একচালা টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ে ২৮৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। বৃষ্টিতে শ্রেণিকক্ষে জলাবদ্ধতা সরিয়ে ক্লাস চালাতে হতো। আর ঝড়-বৃষ্টিতে ক্লাস বন্ধ রাখা হতো। এদিকে গত ২৫ এপ্রিল নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। পরে নতুন ভবন পরিদর্শনে এসে প্রকৌশলীরা কাজের কিছু ত্রুটি পায়।
পরে সেই ত্রুটি দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ভবন নির্মাণের আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ভবন বুঝে পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠের একপাশে টিনের চালাসহ ভাঙা ঘরে চলছে পাঠদান ও বার্ষিক পরীক্ষার কার্যক্রম।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন রয়েছে। যার একটি কক্ষে বিদ্যালয়ের অফিস রুম ও অপর কক্ষে দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে ৷ এই ভবনের পাশেই চারতলা ফাউন্ডেশনসহ দুইতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যা এখনও হস্তান্তর করা হয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। অপরদিকে বিদ্যালয়ের একপাশে টিনের চালাসহ ভাঙা ঘরে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেখানে রোদে পুড়ে প্রাথমিক বিজ্ঞান পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুবর্না আক্তার বলেন, ‘এখন তো বৃষ্টি নাই। তাই ভাঙা বেড়া দিয়ে শরীরে রোদ লাগে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে তো ক্লাসই করতে পারি নাই। বৃষ্টি হলেই এই ঘরে পানি জমে থাকতো। বৃষ্টিতে ভিজেই ক্লাস করতে হতো আমাদের। আমরা নতুন বছরে নতুন বিল্ডিংয়েই ক্লাস করতে চাই।’
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আলেয়া পারভীন আক্ষেপ করে বলেন, নতুন ভবন হস্তান্তরের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন ভবনে উঠতে পারছি না। কিন্তু পাশে ভাঙা চালার নিচে কষ্ট করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। ভাঙা ঘরে বৃষ্টির সময় তো পানি সেচে তারপর ক্লাস নিতে হতো। নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন নতুন বছরের আগেই যদি আমাদের কাছে ভবনটি হস্তান্তর কর হয়, তবে শিক্ষার্থীসহ সকলের কষ্ট লাঘব হবে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটার শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৫ এপ্রিল নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার প্রকৌশলীর আরও কিছু কাজ করতে বলেন। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বিদ্যালয়ের জন্য আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। যে কোনো দিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ভবন নির্মাণের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, কাজে কিছু ত্রুটি থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ইতিমধ্যে ভবন হস্তান্তরের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় অফিসে প্রত্যয়ন দিয়ে দিতে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে ভবন হস্তান্তর জন্য বলা হয়েছে। শুনেছি বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র পাঠানো হচ্ছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ